নিজস্ব প্রতিনিধি
Published:02 Feb 2024, 05:54 PM
স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজে মুসল্লিদের ঢল
গাজীপুর :
ইজতেমার প্রথম দিনে লাখ লাখ মানুষের পদচারণায় মুখরিত ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগতীরে এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লী এসে যোগ দিয়েছেন।
শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার কর্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় এদিনে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার নামাজ। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।
সকাল থেকেই টঙ্গী, ঢাকা, উত্তরা, আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার আশপাশের এলাকার লোকজন জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লীরা মহাসড়ক ও অলিগলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন। এক পর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন সাময়িক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জুমার আগের বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক, জুমার খুতবা পড়েন বাংলাদেশের মাওলানা কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনিই জুমার নামাজের ইমামতি করেন। জুমার পর মাঠের মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করেন জর্ডানের মাওলানা ওমর খতিব সাহেব। বাদ-আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের ও বাদ-মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির মতবিনিময়ঃ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিদেশী খিত্তা সংলগ্ন এলাকায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন ইজতেমা আয়োজক কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ইজতেমার আয়োজক মুফতি আমানুল হক ইজতেমার সার্বিক বিষয়াদী নিয়ে কথা বলেন। এসময় মিডিয়া বিষয়ক সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান উপস্থিত ছিলেন।
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণঃ জুমার নামাজে শরিক হন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: গাজীপুর মেট্টাপুলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম জানান, শুক্রবার সকালে বিদেশী কিত্তা সংলগ্ন কন্ট্রোল রুমে এক প্রেস ব্রিফিংএ বলেন, জুমার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুল্লিরা এখানে আসেন। মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজটমুক্তভাবে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে। প্রতিটি দেশী বিদেশী খিত্তায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। সম্ভাব্য যে কোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ সজাগ রয়েছে। তিনি কোন ধরণের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রবিবার আখেরী মোনাজাত হবে। অংশ নেয়া মুসল্লি ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য মুসল্লি আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা এলাকায় আসেন। সেটির জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত হতে টঙ্গী ব্রীজ, কামারপাড়া ব্রীজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরেরবাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রশাসক জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার ও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশী মুসল্লি : পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ইজতেমার পর্বের প্রথম দিন ৪৩টি দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার মুসল্লী ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
কন্ট্রোল রুম : বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের খেদমতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের (ডেসকো) পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা পুলিশ সদস্যের মৃত্যুঃ টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় ডিউটি করতে আসার পথে বাসের ধাক্কায় পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন পুলিশে এক এসআই।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে টঙ্গী পূর্ব থানার মিলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশের এএসআই হাসান মানিকগঞ্জ জেলার কোর্টে কর্মরত ছিলেন। আহত পুলিশের এসআই আমির হামজা মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ কন্টোল রুমে কর্মরত ছিলেন। তাদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
© দিন পরিবর্তন