দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:28 Dec 2023, 08:22 PM
হত্যার রাজনীতি কাঙ্ক্ষিত নয়
বাংলাদেশের মানুষের কাছে নির্বাচন মানেই উৎসব। তবে এই উৎসবের মাত্রাকেও মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যায় আতঙ্ক। জীবনের আতঙ্কের চাইতে ভয়ংকর আর কিছুই হতে পারে না। বিজয়ের ৫৩ বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনও এই দেশে পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি বিরাজমান। এ প্রজন্মের তরুণরা এসব দৃশ্য দেখে মর্মাহত।
বর্তমান প্রজন্ম আজ দেখছে সাজানো সোনার বাংলায়ও অরাজকতা আর হানাহানি চলছে। যা মোটেও প্রত্যাশাযোগ্য ছিল না। আমাদের রাজনীতিবিদরা এই সাজানো-গোছানো দেশটাকে নিয়ে এমন বিবেকহীন কর্মকাণ্ড করতে পারেন না। রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবে, ভিন্ন দল থাকবে। তাই বলে গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ পুড়িয়ে রাজনীতি করা কাম্য হতে পারে না। স্বাধীন বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সেই কথা বলেছেন। তিনি চেয়েছেন সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়তে।
দেশের মানুষের কাছে এবারের বিজয়ের মাস এক অন্যরকমভাবে কাটছে। আগেই বলা হয়েছে, এটা একদিকে যেমন উৎসবের আমেজের মতো, অন্যদিকে সেটা ভয়ের পরিবেশও সৃষ্টি করে। নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ের মাসে নির্বাচন- এটা দারুণ একটা বিষয়। কিন্তু এই মাসেই আমরা দেখলাম ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়াতে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়াতে। দেখেছি ভাঙচুর করতে, মানুষকে আঘাত দিতে। যা মোটেও বাংলার মানুষ চায় না।
যাদের কারণে আজ আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের প্রতি সম্মান রেখে হলেও আমাদের উচিত বিভেদের রাজনীতি ভুলে এক হওয়া। আমাদের দেশের জন্য শহীদ হওয়া মানুষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবারের নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। বর্তমান প্রজন্ম এটাই চায়।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতাই আসুক না কেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বর্তমানে দেশ উন্নয়নের মধ্যেই রয়েছে। এখন প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসায় ১ জানুয়ারি বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। শুধু শিক্ষা খাত নয়, প্রতিটি খাতেই এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান। কয়েকটি খাতে উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। সেসব কাজও নির্বাচিত সরকার পূরণ করবেন বলে বিশ্বাস রাখি।
দেশে শিক্ষিত বেকারের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। এর কারণ দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই পর্যাপ্ত। পড়ালেখা শেষ করেও কোনো কর্মের সুযোগ মেলে না। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকেই চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে আবার জীবনের তাগিদে নোংরা ও ঘৃণ্য কাজ বেছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, হয়ে উঠছে দেশের জন্য বিপজ্জনক। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে একটি মহল তাদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তাই সরকারে যারাই আসুন না কেন- কোনো শিক্ষিত বেকার যেন দেশে না থাকে, কোনো শিক্ষিত ছেলেমেয়ে যেন কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে-এ বিষয়গুলো তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন- এটাই সবার প্রত্যাশা।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ প্রজন্মের প্রত্যাশা- উন্নয়নের গতি যেন ছন্দ না হারায়। একই সঙ্গে নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের অসঙ্গতি আর অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, এটাই আমাদের কামনা।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
© দিন পরিবর্তন