দিন পরিবর্তন ডেস্ক
Published:11 Apr 2021, 06:57 AM
হাসপাতালে বেডের জন্য হাহাকার
বাড়ছে করোনা রোগী, সেই সাথে হাসপাতালে বাড়ছে ভিড়৷ তবে শয্যা সংকট থাকায়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না অনেকেই৷
রাজধানীর উত্তরখানের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমকে (৫৫) নিয়ে তার ছেলে রায়হান গত ২ এপ্রিল একের পর এক রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে যান৷ গুরুতর অসুস্থ মায়ের জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন প্রয়োজন৷ কিন্তু কোনো হাসপাতালই প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন দিতে পারেনি৷ মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান মা৷
চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন অনেকেই৷ দেশের কোনো হাসপাতালেই এখন আইসিইউ শয্যা খালি নেই৷ সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী সারওয়ারও আইসিইউ পাননি৷ পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়৷
করোনা ভাইরাসের নতুন ঢেউয়ে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় হঠাৎ করে বিপুল রোগীর চাপ সামলাতে পারছে না রাজধানীর হাসপাতালগুলো৷ মারাত্মক শয্যা সংকট তৈরি হওয়ায় যথাসময়ে চিকিৎসা না পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমাদের প্রায় ৮০০ বেড করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এখন এর একটিও খালি নেই৷ প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে৷ এর মধ্যে যে রোগীদের অক্সিজেন দরকার শুধু তাদেরই ভর্তি করা হচ্ছে৷ অন্যদের ভর্তি করার কোন সুযোগ নেই৷ আইসিইউ তো একেবারেই খালি নেই৷'' সামনের দিনে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবেন জানতে চাইলে নাজমুল হক বলেন, ‘‘এখানে বেড বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই৷ বেড বাড়ানো হলে এখন যেসব রোগী আছে তাদের চিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটবে৷ ফলে সুস্থ্য হয়ে কেউ গেলেই শুধু বেড খালি হচ্ছে৷’’
এদিকে প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে৷ শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত ৫ হাজার ৩৪৩ জন৷ একদিনে এত মৃত্যু মহামারি শুরুর পর আর হয়নি৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে৷ গত ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত মোট ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়৷ আর ৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে অর্থাৎ, এই ৭ দিনে মারা গেছেন ৪৪৮ জন৷
এমন অবস্থার বিপরীতে হাসপাতালগুলোতে চলছে সংকট৷ ঢাকার বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে শয্যা মারাত্মক সংকটের বিষয়টি জানা গেছে৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আজকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে একটি বেডও খালি হয়নি৷ ফলে নতুন রোগী ভর্তি করা যায়নি৷ তবে আমরা ১০০ বেড আর ১০টি আইসিইউ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি৷ এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে একটি বেড বা আইসিইউও খালি নেই৷'' শুধু বেড বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না, এভাবে সম্ভব হবে না৷ আমরা তো বলছি, এখনই কঠোর লকডাউন দিয়ে মানুষের চলাচল সীমিত করতে হবে৷ পাশাপাশি কোনো পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আইসুলেশনে পাঠাতে হবে৷’’
একই পরিস্থিতি কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালেরও৷ এ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, তার হাসপাতালে গত সপ্তাহের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ৷ যত সময় যাচ্ছে, রোগী তত বাড়ছে৷ কোন রোগী ছাড় পাওয়ার পরপরই সেখানে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন৷ আইসিইউ পূর্ণ৷ এখন যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই অক্সিজেন প্রয়োজন৷ ফলে সবাইকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে৷
এখনই হাসপাতালগুলো সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে, রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে? জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখনই বেড পাচ্ছে না, ভবিষ্যতেও পাবে না৷ এখন তিনজন পাচ্ছে না, ভবিষ্যতে ১৩ জন পাবে না৷ এই তো? আমরা বারবার বলছি, ১৫ বা ২১ দিনের লকডাউন প্রয়োজন৷ মানুষের মুভমেন্ট সীমিত করতে হবে৷ কিন্তু সরকার সাতদিনের লকডাউন দিল, এখন বলছে, আরো সাতদিনের কঠোর লকডাউন দেওয়া হবে৷ কঠোর লকডাউনটা অবার কী? সাতদিনে আপনি কিভাবে বুঝবেন পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে এসেছে কী-না? ফলে এখন যা হচ্ছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে না যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে৷ সামনের দিনে আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷’’
একই কথা বলছিলেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন৷ গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আইসিইউ সেট-আপ করতে হয়ত সময় লাগে, কেননা এতে জনবল লাগে৷ কিন্তু হাই-ফ্লো অক্সিজেনের সাপ্লাইটা আমাদের বাড়াতে হবে৷ সেটার সক্ষমতা আমাদের আছে৷ দ্রুত এটা করতে হবে৷ অনেক রোগীকে শুধু অক্সিজেন দিয়েই সুস্থ করে তোলা সম্ভব৷’’
© দিন পরিবর্তন