নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:11 Sep 2022, 06:46 PM
১ মাসেও ভেড়ামারা দফাদার ফিলিং স্টেশনের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দফাদার ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ পাঁচজনের সবাই মারা গেছেন। দৌলতপুর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের শাহাজুদ্দীনের ছেলে সাহাজুল (৩০), একই এলাকায় তৌহিদুল ইসলামের ছেলে বিজয় (২৮), দৌলতপুর উপজেলার আল্লাহর দর্গা এলাকার রাজ্জাকের ছেলে ও দফাদার ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী রাজিব উদ্দিন রনি (২৬), দৌলতপুর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে রিমন (১৪) ও ভেড়ামারা উপজেলার পরানখালী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) মারা গেছেন।
ভেড়ামারা দফাদার ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্ষন্ত কোন মামলা দায়ের হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্ষন্ত মালিক গ্রেপ্তার হয়নি। গ্রেপ্তার না হওয়ায় এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতো বড় ঘটনার পর এখন পর্যন্ত কোন মামলা হলো না তাও বুঝতে পারছেন না কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের কুষ্টিয়া-দৌলতপুর সড়কের পাশে মহিষাডোরা এলাকার দফাদার ফিলিং স্টেশনে ট্যাংকি থেকে তেল আনলোড করার সময় হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ভেড়ামারা ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় ওই ফিলিং স্টেশনে তেল সরবরাহ করতে গিয়ে সাহাজুল ও বিজয় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। ১২ আগস্ট রাত ৮টার মারা যান দৌলতপুর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের শাহাজুদ্দীনের ছেলে সাহাজুল (৩০) ও একই এলাকায় তৌহিদুল ইসলামের ছেলে বিজয় (২৮)। ১৩ই আগষ্ট শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দৌলতপুর উপজেলার আল্লাহর দর্গা এলাকার রাজ্জাকের ছেলে ও দফাদার ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজিব উদ্দিন রনি’র (২৬) মৃত্যু হয়েছে। গত ১৮ই আগষ্ট শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দৌলতপুর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের মৃত জয়নালের ছেলে রিমন (১৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ৭ই সেপ্টেম্বর বুধবার ভোর রাতে ভেড়ামারা উপজেলার পরানখালী গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
ভেড়ামারায় দফাদার ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের পরের দিন গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শেষ করে ঘটনাস্থলের বেআইনি ও বিধি লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসিকে প্রতিবেদন দেয়। তদন্তে বিধি লঙ্ঘনের কারণে অগ্নিকাণ্ড ও জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সত্যতা পাওয়া গেলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা করেননি কেউ।
এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন বানুকে প্রধান ও ভেড়ামারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত এবং কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলমসহ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ইতোমধ্যেই তদন্ত শেষ করে ঘটনাস্থলের বেআইনি ও বিধি লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরে ওই ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসিতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানায় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান নাসরিন বানু বলেন, সেখানে অগ্নিনির্বাপনী ব্যবস্থার বিচ্যুতি ছাড়াও বেআইনিভাবে অতিরিক্ত ট্যাংক ব্যবহারের সময়েই এ দুর্ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই পাম্পের কর্মকাণ্ড বিষয়ে অনুমোদনটিও ছিল অসম্পূর্ণ। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিপিসিতে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানান।
ঘটনার সময় উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দেওয়া কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানে আলম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিদগ্ধ আহতদের উদ্ধারের সময় ওই ফিলিং স্টেশনে সতর্কতা অবলম্বনে যেসব বিধি পালনের কথা তার কিছুই সেখানে মানা হতো না। একইসঙ্গে এ ঘটনায় যারা অগ্নিদগ্ধ হন তারা কেউই দাহ্য পদার্থ নাড়াচাড়া করা কোনো প্রশিক্ষণ নেননি। সেখানে যে কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল তা সুস্পষ্ট অপরাধ। এতবড় ঘটনার পরও এখন পর্যন্ত কেন কেউ মামলা করল না তাও বুঝতে পারছেন না বলে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা জানান।
দফাদার ফিলিং স্টেশনের মালিক আফানুজ্জামান জুয়েল বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ পাঁচজনের সবাই মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে। বাকিদের সহযোগিতা শীঘ্রই করা হবে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ১টি চিঠি পেয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ জনপ্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান বলেন, ভেড়ামারায় দফাদার ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ এর পরিবার বা এখনও কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি বা মামলা হয়নি। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ পেলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। দফাদার ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ পাঁচজনের সবাই মারা গেছেন।
© দিন পরিবর্তন