২৯-নভেম্বর-২০২৪
২৯-নভেম্বর-২০২৪
Logo
অর্থনীতি

উন্নয়নের টেকসই সুফল আমরা ভোগ করতে পারছি না

নীলাঞ্জন কুমার সাহা
প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-২৩ ১৫:৫৩:১২
...

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। যদিও বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তথাপি, ভোট গ্রহণে বড় কোনো বিশৃঙ্খলা ও কারচুপির অভিযোগ ছাড়াই নির্বাচন শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে চাপ ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে প্রশমিত হচ্ছে।

কাজেই, ব্যাপক কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ইস্যুর সৃষ্টির না হলে আপাতত রাজনীতির ময়দান শান্ত থাকবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে, অর্থনীতির অশান্ত পরিবেশ থেকে আমরা সহসা পরিত্রাণ পাব বলে মনে হচ্ছে না।

অর্থনীতি যে বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত তা অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক জানুয়ারি-জুন ২০২৪ মুদ্রানীতি বিবৃতিতে প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় কারণ তুলে ধরেছে যা ২০২৩ সালের মন্থর অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার জন্য দায়ী। এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব না কমানো গেলে তা দেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।

কারণগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বচাপ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.০২ শতাংশ যা ২০২২ অর্থবছরে তুলনায় ২.৮৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৬ শতাংশে রেখেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে মূল্যস্ফীতিকে এই লক্ষ্যে টেনে রাখা কি আদৌ সম্ভব!

মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো তার প্রাক-কোভিড-১৯ প্রবৃদ্ধির স্তরে পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলমান বাজেটে প্রস্তাবিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ অর্জন প্রায় অসম্ভব।

উপরন্তু, অর্থনীতিকে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হুমকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কোভিড ১৯ অতিমারি, রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ব্যাঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে বহু দশকের উচ্চতায় ৮.৭ শতাংশে পৌঁছে।

যদিও আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক-অক্টোবর ২০২৩ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। ২০২৩ সালে ৬.৯ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৫.৮ শতাংশে নামার প্রাক্কলন করা হয়। তবে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য পথে ফিরে আসা প্রত্যাশিত নয়। তবে আমাদের অর্থনীতিতে এমনটাও প্রত্যাশা করা যাচ্ছে না।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হ্রাসের প্রবণতা অনুভব করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ ডিসেম্বর শেষে গ্রস হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পরিমাণ ছিল ২৭.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ছিল ২১.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিবৃতি যাই ব্যাখ্যা করুক না কেন, বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের অর্থনীতির বেহাল অবস্থার জন্য আসল শত্রু হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতিই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সমস্যার আঁতুড় ঘর।

২০২২ ডিসেম্বরে গ্রস হিসাবে ছিল ৩৩.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ওই বছর জানুয়ারিতে ছিল ৪৪.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের পতন দৃশ্যমান। এই পতন না থামানো গেলে অর্থনীতির সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। জরুরি আমদানি ব্যাহত হবে। দেশীয় উৎপাদন হ্রাস পাবে। আর বিপর্যস্ত হবে অর্থনীতি।

চতুর্থত, যে সমস্যাটা অর্থনীতির অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করা হয়েছে তা হচ্ছে বিনিময় হারের অস্থিরতা। একদিকে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে বৈষয়িক মূল্যস্ফীতি এই দুই এর ঊর্ধ্বচাপে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলার না থাকায় বেড়েছে এর দাম।

২০২২ সালের এপ্রিল প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) নির্ধারিত ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ দাম ১১০ টাকা। কিন্তু বাফেদা ও এবিবি’র বেঁধে দেওয়া ওই দামে বাজারে ডলার পাওয়া যায় না। ডলার বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রায় ১২৬ টাকা করে। এই হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে নির্ধারিত দরে ৩০ শতাংশ এবং বাজার দরে ৪৮ শতাংশ।

বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন এক ধরনের বিনিময় হার ব্যবস্থার প্রচলন করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চ বিনিময় হারের অস্থিরতার সময়ে ক্রলিং পেগ হলো নির্দিষ্ট সময়ান্তে অল্প অল্প করে বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি ব্যবস্থা।

এখানে নির্দিষ্ট মুদ্রার মান নির্ধারিত হারের একটি ব্যান্ড ব্যাসের মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। পদ্ধতিটি স্থির ও ভাসমান বিনিময় হার ব্যবস্থার সংমিশ্রণ। এখন দেখা যাক, ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিটি ডলারের মূল্য স্থিতিশীলতায় কতটুক কাজে আসে!

পঞ্চমত, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কারণটি নিয়ে উদ্বিগ্ন তা হচ্ছে, নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল)-এর বৃদ্ধি। মোট ঋণ এবং অগ্রিমের সাথে মোট এনপিএল-এর অনুপাত ২০২০ সালে ছিল ৭.৭ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৭.৯ শতাংশ। পরবর্তীতে, ২০২২ সালে ৯ শতাংশে এবং বিগত ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১০.১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ব্যাংকটির মতে, ঋণের অপর্যাপ্ত মূল্যায়ন, ফলোআপ এবং তত্ত্বাবধান এনপিএল বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী।

তবে এটা সত্যি যে, মন্থর অর্থনৈতিক গতির সাথে সাথে আমাদের অর্থনীতিতে এক দশকে ভৌত অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টানেল, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আরও অনেক সেতু, রাস্তাঘাট, প্রভৃতি। আর এর সুফলও আমরা পাচ্ছি। তবে, এই উন্নয়ন অর্থ জোগান দিতে গিয়ে সরকারকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। আইএমএফ থেকেও শর্তসাপেক্ষে ঋণ নিতে হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩২৮ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী অর্থবছরে তা ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। পরের বছরগুলোয় ঋণ পরিশোধ বাড়তেই থাকবে। ঋণ পরিশোধের এই চাপ বাড়ছে এমন সময়ে, যখন দেশ ডলার-সংকটে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে। ডলারের দাম বৈষম্যের কারণে সরকারি মাধ্যম আসা প্রবাসী আয় কমছে। রপ্তানি আয়ও আশানুরূপ নয়। এর মানে, ঋণ পরিষদের বাড়তি চাপে অর্থনীতি পড়ছে অর্থ সংকটে। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আয় না হওয়ায় সরকারের অর্থ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। অর্থ সংকটের কারণে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, জ্বালানি সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির দায় বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো পাবে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো।

নির্বাচিত শাসকদলেরও উচিত রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতি শিগগির সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
ভর্তুকি ও প্রণোদনার অর্থ বকেয়া পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাংক ও গ্রাহকরা। এই অবস্থায় ভর্তুকি পরিশোধে বিকল্প পথ হিসেবে সরকার ব্যাংকের পাওনার বিপরীতে বিশেষ বন্ড ইস্যু করছে। এই ধরনের বন্ড ব্যাংকের তারল্য সমস্যার সমাধান করে না। কেননা, ব্যাংক কোনো অর্থ হাতে পায় না। ফলশ্রুতিতে, বড় অংকের গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে, গ্রাহকরাও আছে দুশ্চিন্তায়।

তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিবৃতি যাই ব্যাখ্যা করুক না কেন, বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের অর্থনীতির বেহাল অবস্থার জন্য আসল শত্রু হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতিই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির সবগুলো সমস্যার আঁতুড় ঘর। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শেয়ারের মূল্য বা ডলারের মূল্য কারসাজি, মুদ্রা পাচার, খেলাপি ঋণ, এই সবকিছুর পেছনেই রয়েছে দুর্নীতি। এমনকি, দুর্নীতির বিষাক্ত থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। এবার বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১০তম, যা গতবার ছিল ১২তম। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন ২০২৩-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। এর ফলে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। উপরন্তু, দুর্নীতির ব্যাপকতা ঘনীভূত ও বিস্তৃত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট দুর্নীতিরও আবির্ভাব ঘটেছে। রাহুর মতো গ্রাস করছে অর্থনীতিকে। এর করাল গ্রাস অর্থনীতির অন্যান্য উন্নয়নের আলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। আমরা আমাদের উন্নয়নের টেকসই সুফল ভোগ করতে পারছি না। দুর্নীতি যদি আরও তীব্র আকার ধারণ করে তবে, যেকোনো সময় রাজনীতির ময়দানকে অশান্ত করে দিতে পারে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যের কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

একদিকে যেমন সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের চাপ সামলাতে হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। তাছাড়া, দুর্নীতির অর্থ মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী বা ব্যক্তির কাছে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আর, পুঞ্জিভূত অর্থই বৈদেশিক মুদ্রায় অবৈধ উপায়ে পাচার হচ্ছে বিদেশে। ফলশ্রুতিতে, আমাদের ক্রয় ক্ষমতা সংকুচিত হচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা মজুদে টান পড়ছে।

দীর্ঘদিন প্রতিকার না থাকায় দুর্নীতি আমাদের সমাজের অস্থিমজ্জায় ঢুকে গেছে। ফলে, রাতারাতি দুর্নীতি মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তবে, সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম পক্ষে একটি সহনশীল পর্যায়ে দুর্নীতি কমিয়ে আনার জন্য যা যা করা দরকার তাই করতে হবে সরকারকে। তাহলেই, সাধারণ জনগণ সরকারের উপর আরও আস্থা রাখবে এবং তারা অর্থনৈতিক শঙ্কা মুক্ত হবে। আর, দুর্নীতির রাহু মুক্ত হয়ে অর্থনীতি দাঁড়াবে মজবুত ও টেকসই ভিত্তির ওপর। সোনার বাংলা বিনির্মাণে এটাই এখন আমাদের সকলের কাম্য।

লেখক : অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

/মামুন