দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিপুল লোকসানে আছেন বড় ব্যবসায়ীরা। ফৌজদারি, দেওয়ানি, সালিশি আইন ও কোম্পানি আইনসহ ৩০টি আইনে প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির বিরুদ্ধে এক লাখ ১৫ হাজার মামলা রয়েছে লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। এসব মামলার সাথে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ জড়িত। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সুইজারল্যান্ডের ‘দ্য লার্জ মেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামের ‘বাংলা অরবিট সাপার লিমিটেড’ এর সাথে বাংলাদেশ থেকে উন্নত মানের বাঁশ কেনার জন্য সরাসরি চুক্তি করে। ২ লাখ ৮৬ হাজার ডলার চুক্তির মাধ্যমে তিন লটে ওই বাঁশ সরবরাহ করার কথা। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম লটে এলসির মাধ্যমে ৯০ হাজার ডলার মূল্যের বাঁশ সরবরাহ করে বাংলা অরবিট সাপার লিমিটেড। পরের দুই লটের জন্য এক লাখ ডলার অ্যাডভান্স পেমেন্ট নেয় বাংলাদেশি কোম্পানিটি।
কিন্তু চুক্তি লঙ্ঘন করে আর কোনো বাঁশ সরবরাহ করেনি বাংলা অরবিট। এক লাখ ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর সুইজারল্যান্ডের ওই কোম্পানি টাকা ফেরত চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কয়েক দফা নোটিশ করে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশি একটি ল’ ফার্মের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করে দ্য লার্জ মেট। বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. এম জহির। ১৯৯০ সালের মার্চ মাসের এক রায়ে ১০ হাজার ডলার জরিমানাসহ এই টাকা পরিশোধের রায় দেন চট্টগ্রামের আদালত।
বাংলা অরবিট সাপার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আমানুর রহমান বাকি বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। একইসাথে আরো ১০ হাজার ডলার জরিমানা যোগ করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। শাহ আমানুর রহমান বাকি হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন। এতোদিনে সুইজারল্যান্ডের ওই কোম্পানি পারিবারিকভাবে অংশীদারি ভাগ করে নিয়ে আরো দুটি নতুন কোম্পানি খোলে।
২০১১ সাল পর্যন্ত আপিল বিভাগে এই মামলা পরিচালনা করে দ্য লার্জ মেট। একপর্যায়ে এই টাকা পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। একটি চিঠির মাধ্যমে মামলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত ড. এম জহিরকে জানিয়ে দেয় তারা। তবে এখনো আপিলটি নিষ্পত্তি হয়নি। এই আইনজীবী ২০১৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত ড. এম জহিরের ল’ ফার্মের একজন আইনজীবী জানান, এখন আর মামলাটি তদবির করা হচ্ছে না। ফলে শুনানির জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। বিদেশি কোম্পানিটি এই টাকার দাবি ছেড়ে দিয়েছে।
বাংলা অরবিট সাপার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আমানুর রহমান বাকি বলেন, সুইজারল্যান্ডের ওই কোম্পানির টাকা আত্মসাত করা হয়নি। তাদের জন্য যে বাঁশ কেনা হয়েছিল, ১৯৮৭ সালের জলোচ্ছ্বাসে ওই বাঁশগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাস সরবরাহ করা যায়নি। এই বাঁশের জন্য যে বীমা ছিল, সেই বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা চলছে, সেটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় দ্য লার্জ মেটের টাকা ফেরত দিতে পারিনি।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত শুধু এই মামলাই নয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতে দুই লাখ ১১ হাজার মামলা এখন পর্যন্ত অনিষ্পন্ন রয়েছে। যে মামলাগুলোর সাথে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ জড়িত বলে জানায় সলিসিটর উইং।
এসব মামলার মধ্যে বিদেশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির সাথে বাংলাদেশি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির মামলা প্রায় ৩৪ হাজার। ২ লাখ ১১ হাজার মামলার মধ্যে দশ বছরের বেশি পুরাতন মামলা রয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সরাসরি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যবসা সংক্রান্ত ক্ষতিসাধন হচ্ছে। অনেকে মামলার কারণে ব্যবসা হারিয়েছেন। এছাড়াও এসব মামলায় যেসব টাকা আটকানো সেগুলো থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন এসব মামলা চলার কারণে বিদেশি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে।
এই মামলাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির এক লাখ ১৫ হাজার মামলা রয়েছে লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। এছাড়াও রয়েছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত বিরোধ, মালিকানা নিয়ে বিরোধ, চুক্তি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিরোধ, প্রতারণা, বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ, মানহীন পণ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিরোধ।
আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ৭৮ হাজার ২০১টি, ২০১৩ সালে ৮৬ হাজার, ২০১৪ সালে ১ লাখ ১৩ হাজার, ২০১৫ সালে ১ লাখ ১৯ হাজার, ২০১৬ সালে ১ লাখ ১৬ হাজার, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৩৪ হাজার, ২০১৮ সালে ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৮টি, ২০১৮ সালে ১ লাখ ৭৩ হাজার, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৮৮ হাজার, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৩০ টি, ২০২১ সালে ২ লাখ ৪ হাজার, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ২ লাখ ১১ হাজার মামলা রয়েছে। সলিসিটর উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে এই মামলার হিসেব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই মামলাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির এক লাখ ১৫ হাজার মামলা রয়েছে লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। এসব মামলার সাথে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ জড়িত।
কিভাবে এই টাকার হিসাব প্রস্তুত করেছে সলিসিটর উইং, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব মামলা দায়ের করতে হলে প্রতি হাজার বা লাখ টাকার ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমান কোর্ট ফি ও আদালত ফি জমা দিতে হয়। সেই হিসেবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি দাঁড়ায়।
সলিসিটর উইংয়ের তথ্য বলছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ ও নিম্ন আদালতে ২০১৯ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৬,৩০৯টি মামলা, ২০২০ সালে ২২১৩টি, ২০২১ সালে ৮ হাজার এবং এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ২০৩টি মামলা।
কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম বলেন, কোম্পানি মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ, দেশে উপযুক্ত আদালত ও বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। এছাড়াও দক্ষ বিচারকের অভাব রয়েছে। বিচারিক আদালতগুলোতে বাণিজ্য সংক্রান্ত মামলার বিচার পরিচালনার জন্য কোনো পৃথক আদালত নেই, যা উন্নত দেশগুলোতে রয়েছে।
তিনি বলেন, হাইকোর্টে বাণিজ্য সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্যও কোনো পৃথক বেঞ্চ নেই। কোম্পানি সংক্রান্ত মামলা ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মাত্র একটি বেঞ্চ রয়েছে। হাইকোর্টে কমপক্ষে ৫টি বেঞ্চ থাকা দরকার শুধু কোম্পানি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য।
কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাহ আহসানুর রহমান বলেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধগুলো নিয়ে বিভিন্ন আইনে মামলা হয়। যেমন ফৌজদারি, দেওয়ানি, সালিশি আইন ও কোম্পানি আইনসহ প্রায় ৩০ টি আইনে এসব মামলা হয়।
সরকারের উচিত বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধগুলো মীমাংসা ও মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি অভিন্ন আইন প্রণয়ন করা দরকার, যে আইন অনুযায়ী পৃথক আদালত ও হাইকোর্টে পৃথক বেঞ্চ থাকবে। সেই বেঞ্চ ও আদালতগুলোর বিচারকদের বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়াও ইংল্যান্ডের মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সাময়িক আদালত গঠন করতে পারে এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য। যে আদালত ও বেঞ্চগুলোতে বাণিজ্য আইন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে ।
কোম্পানি আইনবিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উন্নত দেশগুলোতে আদালতের বাইরে সালিসের মাধ্যমে অলটারনেটিভ ডিসপুট রেগুলেশন (এডিআর) প্রয়োগ বাধ্যতামূলক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ এখন প্রায় ৮০টি দেশে এরকম বিরোধ এডিআর প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়নি।
এই আইন বিশেষজ্ঞ বলে, ওইসব দেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এডিআর প্রয়োগে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ২/১ টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়কে একটি পলিসি নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানায়। আইন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আইন কমিশনকে এ বিষয়ে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের অনুরোধ করে। সে অনুযায়ী আইন কমিশন ‘বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি আইন’ নামে একটি একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছে।
মূলত সালিশি আইন-২০০০ সংশোধন করে এই আইনটির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান আইন কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি সালিশ রোয়েদাদের স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজতর ও যুগোপযোগীকরণ, বাংলাদেশে আদালতের বাইরে সালিশি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত বিচারব্যবস্থার পদ্ধতিগত জটিলতা পরিহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক বিরোধসমূহ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন এবং বিশেষ করে, আদালতে বিরাজমান মামলাজট হ্রাসকরণে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা জোরদারকরণের লক্ষ্যে আইন কমিশন সালিশ আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে। আইনটি প্রণীত হলে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির গতি বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।
খসড়াটিতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়ার কাজ চলছে বলে জানায় আইন কমিশন। শিগগিরই আইনের খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০১৬ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর এক স্টাডিতে উঠে বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির অভাবে প্রতিবছর বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। আর শুধু বাংলাদেশেই এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধের মামলাগুলো এখন বেশ বড় আকার ধারণ করেছে। এর পরিমাণ কমাতে একটি নতুন আইন করা হচ্ছে। আশা করি এবার সেটি প্রণয়ন করা সম্ভব। আইনটি প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের বাণিজ্যের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL