অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে দেশজুড়ে একবার ব্যবহারযোগ্য (ডিসপোজেবল) ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমনকি যেসব প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণী ধূমপানে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাদেরকেও ধীরে ধীরে ধূমপানমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। শিগগিরই এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ই-সিগারেট প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ উদ্যোক্তাদের সংগঠন ইউকে ভ্যাপিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিশেন। সেই সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি সত্যিই সরকার এই কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটের ক্ষেত্রে তার ফল ভুগতে হবে।
ধূমপান যুক্তরাজ্যে বিরাট একটি সমস্যা। দেশটির প্রতি চার জন ক্যানসার রোগীর একজন ধূমপানের কারণে এই রোগটিতে আক্রান্ত হন। এছাড়া ক্যানসার ও নিয়মিত ধূমপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ব্রিটেনে মৃত্যু হয় অন্তত ৮০ হাজার মানুষের।
যুক্তরাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর এবং অলাভজনক সংস্থা অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথের (অ্যাশ) তথ্য অনুসারে, শতাংশ হিসেবে ২০২০ সালে যেখানে ৪ দশমিক ১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ধূমপানে আসক্ত ছিলো, ২০২৩ সালে তা বেড়ে পৌঁছেছে প্রায় ৯ শতাংশে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ধূমপানের আসক্তি রোধ করতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি আইন জারির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন ঋষি সুনাক। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি এবং তারপরে যাদের জন্ম হয়েছে, তাদের কাছে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে।
কিন্তু সেই আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। ধূমপায়ীর সংখ্যাও কমেনি।
এদিকে যুক্তরাজ্যে যারা ধূমাপনমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলনে যুক্ত, তাদের অনেকের মতে জনগণকে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য থেকে দূরে রাখতে প্রাথমিকভাবে ই-সিগারেট বা ভ্যাপ বেশ কার্যকর। কিন্তু বার বার ব্যবহারযোগ্য ই-সিগারেটের পরিবর্তে যে হারে ডিসপোজেবল ই-সিগারেট ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে তারাও উদ্বেগ বোধ করছেন।
‘বহুদিন ধরেই আমি এ পদক্ষেপ নিতে চাইছি। যখন আমি কোনো দোকানে প্রদর্শনের জন্য রাখা ডিসপোজেবল ই-সিগারেটগুলো দেখি, তখনই আমার অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উদ্বেগ হয়। আমার বিশ্বাস, ডিসপোজেবল ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হলে তা ব্রিটেনের পরিবেশের জন্যও ইতিবাচক হবে,’ বিবৃতিতে বলেন সুনাক।
উদ্যোক্তাদের হুমকি
এদিকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিবৃতি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে ইউকে ভ্যাপিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিশেন। বিবৃতিতে উদ্যোক্তারা বলেছেন, ‘জনগণকে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য থেকে দূরে রাখতে ই-সিগারেট যে কার্যকর তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। তারপরও সরকার অজুহাত তুলে এই উদ্যোক্তাদের বলির পাঁঠা করতে চাইছে।’
‘সরকারের এই প্রস্তাবিত পদক্ষেপ ই-সিগারেট বিক্রির হার কমাবে না, বরং কালোবাজার থেকে ই-সিগারেট কেনার প্রবণতা বাড়বে কিশোর-কিশোরীদের। আমরা সরকারকে এই পদক্ষেপ প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে।’
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL