টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারানোর পর আশা ছিল নিজেদের সেরা ফরম্যাট ওয়ানডেতে ভালো করবে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচে হেরে সে আশাও ধূলিসাৎ হয় টাইগারদের। সব সিরিজ হারিয়ে যখন দেশে ফেরার পালা, তখন সফরের শেষ ম্যাচ তৃতীয় ওয়ানডেতে জ্বলে উঠলো তামিম বাহিনী। গতকাল বুধবার হারারের ম্যাচে আফিফ হোসেন ও আনামুল হক বিজয়ের দৃষ্টিনন্দন হাফ সেঞ্চুরি আর কাটারমাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের চমৎকার বোলিংয়ের সুবাদে বাংলাদেশ ১০৫ রানের বড় ব্যবধানেই জয় পেল। আফিফ ম্যাচসেরা এবং জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন।
এটা ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৪০০তম ম্যাচ। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ গতকালেরটি সহ মোট জয় পেয়েছে ১৪৪টি আর হেরেছে ২৪৯টি। ৭টি ম্যাচের কোনো ফলাফল হয়নি। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে মোট ৫৪৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে গতকালেরটি সহ হেরেছে ৩৮৫টিতে আর জিতেছে ১৪২টি। তাদের ফলাফল হয়নি ২০টি ম্যাচে। যাহোক, মাইলফলকের ম্যাচটিতে জিতলেও সিরিজ হারানোর বেদনা নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
গতকালের ম্যাচে বাংলাদেশের ৯ উইকেটে ২৫৬ রানের জবাবে জিম্বাবুয়ে করে ৩২.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে। জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজও জিতলো ২-১ ব্যবধানে।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বড় পুঁজি পেয়েও বোলাররা কাজে লাগাতে পারেননি। তবে গতকাল ২৫৬ রানই যথেষ্ট হয়েছে। রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নড়বড়ে জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ওভারেই যথাক্রমে দুই ওপেনার তাকুদজাওয়ানাশে কাইতানো (০) এবং তাদিওয়ানাশে মারুমানিকে (১) ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।
ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই বলে ওয়েসলি মাধেভেরে (১) এবং সিকান্দার রাজাকে (০) সাজঘরের পথ চেনান এই ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডেতে অভিষিক্ত এবাদত হোসেন। তার লাফিয়ে ওঠা বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাধেভেরে। পরের বলেই দুর্ধর্ষ ইয়র্কারে আগের দুই ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান রাজার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন এই পেসার।
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বড় উল্লম্ফনের দিনে উজ্জ্বল ছিলেন তাইজুল ইসলামও। ইনিংসের নবম এবং ১৪তম ওভারে যথাক্রমে জিম্বাবুয়ের প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক ইনোসেন্ট কাইয়া (১০) এবং টনি মুনইয়োঙ্গাকে (১৩) ফিরিয়েছেন তিনি।
সপ্তম উইকেট জুটিতে ক্রিজে থিতু হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ক্লাইভ মাদান্দে এবং লুক জংয়ে, তাদের সেই জুটি থেকে আসে ২৮ রান। এই জুটিতে ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজ। ২১তম ওভারে তার খাটো লেংথের বলে সপাটে ব্যাট চালাতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বর করে ফেলেন জংওয়ে। কাভারে বিজয়ের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৫ বলে ১৫ রান করে।
২৩তম ওভারে আরও দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন মোস্তাফিজ। ওভারের তৃতীয় বলে মাদান্দে (২৪) এবং শেষ বলে ব্র্যাড ইভান্সকে (২) ফেরান এই বাঁহাতি পেসার।
৮৩ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই ক্রিজে দাঁড়িয়ে যান দলটির লেজের সারির দুই ব্যাটসম্যান রিচার্ড এনগারাভা এবং ভিক্টর নিয়াউচি। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে ৬৮ রান তোলেন তারা। তবে এই জুটিতে শেষ পর্যন্ত হারের ব্যবধান-ই যা কমেছে। ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নিয়াউচিকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মোস্তাফিজ।
বাংলাদেশের পক্ষে ৫.২ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৭ রান খরচায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন এবাদত হোসেন এবং তাইজুল ইসলাম।
আগের দুই ম্যাচের মতো সিরিজের শেষ ওয়ানডেতেও টস ভাগ্য পক্ষে আসেনি বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ের আমন্ত্রণে আগে ব্যাটিংয়ে অবশ্য দুই ওপেনারের ব্যাটে শুরুটা মন্দ হয়নি। তামিম ইকবাল এবং বিজয় মিলে ইনিংসের প্রথম ৮ ওভার থেকে ৪০ রান তুলে ফেলেছিলেন। এরপরই শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। ৪১ থেকে ৪৭, এই ৭ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তামিম (১৯), নাজমুল হোসেন শান্ত (০) এবং মুশফিকুর রহিমকে (০) হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।
এক প্রান্তে আসা-যাওয়া চলতে থাকলেও অন্য প্রান্তে বিজয় ছিলেন অবিচল। ঘরোয়া ক্রিকেটে রেকর্ড সংখ্যক রান করে দলে সুযোগ পাওয়া বিজয় ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। পাঁচে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেছিলেন। মাহমুদউল্লাহ ধীরগতিতে ব্যাট চালালেও বিজয় খেলছিলেন সময়ের দাবি মিটিয়ে। ৪৮ বলে তুলে নিয়েছিলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক। তবে বেশি চালিয়ে খেলতেই শেষতক উইকেট খোয়াতে হয়েছে তাকে। ইনিংসের ২৫তম ওভারে লুক জংওয়ের আউটসাইড অফের বল থার্ডম্যানের দিকে ঠেলে দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি হয়ে ফিরেছেন তিনি। ফেরার আগে ৬ চার এবং ৪ ছয় সহযোগে ৭১ বলে ৭৬ রান করেছেন তিনি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ এবং আফিফ হোসেনের ৮১ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়েছিল বাংলাদেশ। গতকালও এই দুজন চেষ্টা করেছিলেন, এদিন পঞ্চম উইকেটে তাদের জুটি থেকে আসে ৪৯ রান। তবে ইনিংসের ৩৫তম ওভারে দলীয় ১৭৩ রানে মাহমুদউল্লাহ রিচার্ড এনগারাভার বল স্টাম্পে টেনে এনে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৬৯ বলে ৩ চারের সাহায্যে ৩৯ রান করেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর বেশিক্ষণ টেকেননি সাতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। ২৪ বলে ১৪ রান করে এই অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন। তবে অন্য প্রান্তে আফিফ হোসেন ততক্ষণে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। শেষদিকে তার ৮১ বলে ৮৫ রানের লড়াকু ইনিংসে ভর করেই সম্মানজনক সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL