২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ঢাকা

ঐতিহ্যবাহী ধনবাড়ী নওয়াব শাহী জামে মসজিদে ৯৬ বছর ধরে চলছে কোরআন তেলওয়াত

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০১-৩১ ১৭:৫১:২৬
...

হাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল :
দেশের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। দীর্ঘ ৯৬ বছর ধরে নামাজের সময় ছাড়া বাকি সময় বিরামহীনভাবে কোরআন তেলাওয়াত চলছে এই মসজিদে। পালাক্রমে একেকজন কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকেন ৭০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী এলাকায় অবস্থিত মসজিদটি ধনবাড়ী নবাববাড়ী মসজিদ নামেই পরিচিত।

ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন ও গুণীজনেরা টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাসকে করেছে নানাভাবে সমৃদ্ধ। ধনবাড়ী একটি প্রাচীন জনপদ ও একসময়ে জমিদারির জন্য বিখ্যাত। মোঘল সুবেদার ইসলাম খানের শাসন চলাকালে সেনাপতি ইস্পিঞ্জার খা ধনবাড়ী আক্রমণ করে দখল নেন। তারাই জমিদার বাড়ির ৩০ বিঘা দিঘির পাড়ে সুদৃশ্য, স্থাপত্য শিল্পের অপরূপ নিদর্শন এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

কালের পরিক্রমায় ধনবাড়ী জমিদারির দায়িত্বে আসেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

হাফেজ আব্দুল ওয়ারেছের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রায়ই তিনি এখানে কোরআন তেলাওয়াত করেন। আগে অবসরে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী মসজিদের সামনে পুকুরঘাটের এই স্থানে বসে কোরআন তেলাওয়াত শুনতেন। মৃত্যুর আগে তিনি ওসিয়ত করে যান, এখানে যেন তার কবর দেয়া হয় আর কবরের পাশে টানা কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী মারা যান। ওসিয়ত অনুযায়ী, তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন পাঁচজন হাফেজ এখানে কোরআন তেলাওয়াতের দায়িত্বে আছেন।

দিন-রাত আলাদা ভাগে একেকজন কোরআন পাঠের দায়িত্বে থাকেন। বর্তমানে হাফেজ আব্দুস সামাদ, হাফেজ মো. কামরুজ্জামান, হাফেজ ওমর ফারুক, হাফেজ মো. ওয়ারেজ আলী নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।

বর্তমানে একটি পদ শূন্য রয়েছে। এদের কেউ অনুপস্থিত থাকলে মসজিদের পাশেই হিফজখানা থেকে ছাত্রদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হয়। আগে ট্রাস্টের মাধ্যমে ইমাম, মুয়াজ্জিন, হিফজখানা ও তেলাওয়াতকারী হাফেজদের বেতন পরিশোধ করা হলেও এখন মসজিদের আয় থেকেই বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।

হাফেজ কামরুজ্জামান বলেন, তিনি ২৬ বছর ধরে এখানে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে অনেক পুরোনো কবরের ওপরে মাইকের হর্নের মাধ্যমে সেই তেলাওয়াতের সুর পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মো. ইদ্রিস হোসাইন ‘দৈনিক দিন পরিবর্তন’ কে জানান, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী নবাব মঞ্জিলের পাশে জনকল্যাণমূলক ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়েন ও সম্পদ ওয়াকফ করে যান। তিনি ছিলেন হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধর। এই মসজিদটি দেখতে দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন লোকজন দেখতে আসে।

নওয়াব আলীর কবরের পাশের দৃষ্টিনন্দন, মার্বেল পাথরে কারুকার্য খচিত এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন। অনেকেই মনের আশা পূরণে এই মসজিদে বিভিন্ন মানত করে থাকেন।

জামালপুরের শরীফপুর থেকে আসা আনিকা আক্তার বলেন, ‘লোকমুখে শুনে মসজিদটি দেখতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে এত সুন্দর মসজিদ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এখানে এসে মান্নতের জন্য এসেছি। ঐতিহ্যগত এই মসজিদটি যাতে টিকে থাকে এজন্য আমরা নওয়াব পরিবার সহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।