২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

তেলের মজুত নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে : বিপিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৭-২৮ ১৮:৪০:১২
...

দেশে জ্বালানি তেলের মজুত নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছে জ্বালানি তেলের আমদানিকারক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।  তাদের দাবি, মজুত নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।  বিপিসি বলছে, এলসি সংকটের কারণে সম্প্রতি আমদানি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।  তবে সেই সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে বিপিসি।  বিতরণ কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনার পক্ষ থেকেও তেল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।  দেশে প্রধান জ্বালানি তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ডিজেল।  বছরে এর চাহিদা ৫৫ লাখ টন।  এর মধ্যে ৪৫ লাখ টনই আমদানি করা হয়, দেশের গ্যাস খনি ও তেল কূপ থেকে মেলে আরও ১০ লাখ টন।

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ডিজেলের মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৫ হাজার টন।  এ ছাড়া ফার্নেস অয়েল আছে প্রায় ৮২ হাজার ৮০০ টন, অকটেন মজুত ১৪ হাজার ৩০০ টন, জেট ফুয়েল ৫৮ হাজার ৭০০ টন, পেট্রোল প্রায় ১৭ হাজার ৬০০ টন এবং কেরোসিনের মজুত আছে ১৩ হাজার ৪০০ টন।

দেশে ডিজেলের মজুতের সক্ষমতা ৬ লাখ টনের বেশি।  অকটেন মজুতের ক্ষমতা ৪৬ হাজার টন, পেট্রোল ৩২ হাজার টন, কেরোসিন ৪২ হাজার টন।  আর ফার্নেস অয়েল মজুত রাখা যায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন।

বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানির এই পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রকৃত মজুত অনেক বেশি।  এই পরিসংখ্যান কেবল বিপিসির মজুত ট্যাংকসংক্রান্ত।  তবে দেশের বেসরকারি শোধনাগারগুলোর নিজস্ব মজুত ব্যবস্থাপনায় আরও পেট্রোল ও অকটেন রয়েছে। এগুলো বিপণন কোম্পানির সরবরাহ লাইনে আসার অপেক্ষায় আছে।

বিপিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশে সাধারণত ৪৫ দিনের ডিজেল সবসময় মজুত থাকে।  তবে এখন তা ৪০ দিনে নেমে আসায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।  হঠাৎ করে ডিজেলের বিক্রি বেড়ে যাওয়া ও সীমান্ত এলাকায় ডিজেল পাচার রোধে রেড অ্যালার্ট জারি হওয়ায় মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।  এ থেকে গুজবের সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মনে করছে বিপিসি।

উদ্বেগের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি দাবি করে কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিজেলের মজুত কিছুটা কমলেও কয়েকটি জাহাজ জ্বালানি তেল নিয়ে চট্টগ্রামের পথে রয়েছে।  অন্যদিকে অকটেন ও পেট্রোল দেশেই উৎপাদিত হয়।  অকটেন ও পেট্রোলের স্বল্প দিনের মজুত নিয়ে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা সঠিক নয়।  এই দুই পণ্যের মজুত সাধারণত এমনই থাকে, কখনও তা বেড়ে ১৯-২০ দিনের হয়।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ভয় পাবেন না।  উদ্বেগের কিছু নেই।  বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও বিপিসির আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ লাইন স্বাভাবিক আছে।  তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অপচয় রোধ করা যায়, পাচার হতে না পারে এবং যাতে কেউ অবৈধ মজুত গড়ে তুলতে না পারে।  এরই সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে কেউ কেউ।  তারা তেলের মজুত নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে।

বিপিসি চেয়ারম্যানের ভাষ্য, দেশে ব্যবহূত পেট্রোলের শতভাগই দেশে উৎপাদিত।  অকটেনের ক্ষেত্রেও প্রায় তাই।  তবে কখনও অকটেনের চাহিদা বাড়লে সামান্য পরিমাণ আমদানি করতে হয়।

এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।  তিনি বলেন, সরকার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে অক্লান্ত কাজ করছে।  এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  তাই কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। তিনি জনগণের দুশ্চিন্তা নিজের কাঁধে নিয়ে কাজ করছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।  সারা বিশ্ব জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকটের মুখোমুখি।  বাংলাদেশকেও এসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।  সবাইকে সেটা মনে রেখে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সংকট কাটাতে সরকারকে সহায়তা করতে হবে।

বিপিসির একজন পরিচালক জানান, আগামী আগস্টে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে।  এর বিপরীতে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঋণপত্র খোলা গেছে মাত্র ১ লাখ টনের।  এতে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেশে ডিজেলের মজুত কিছুটা কমেছে।  তবে তা উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছায়নি।  এরই মধ্যে ভারত থেকে একটি বেসরকারি রিফাইনারিতে অপরিশোধিত তেল এসেছে।  কিছু জাহাজ বিপিসির তেল নিয়ে দেশের পথে।  আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম কমছে।  ফলে সামনে আমদানি আরও বাড়বে।  সংকটের কোনো কারণ নেই।

দেশে পেট্রোল ও অকটেনের স্বল্প দিনের মজুতের তথ্য উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ তথ্য সঠিক নয়।  এ দুটি আমাদের দেশীয় পণ্য।  এগুলোর মজুত সব সময় এমনই থাকে।  গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে কনডেনসেট উৎপাদন বাড়ালে আমাদের উল্টো অকটেন, পেট্রোল রাখা জায়গার সংকটেও কিন্তু পড়তে হয়।