২১-নভেম্বর-২০২৪
২১-নভেম্বর-২০২৪
Logo
শিক্ষা

মাদরাসা আধুনিকায়নের প্রকল্পে ধীরগতি

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১১-১৪ ১৭:৫০:৫৩
...

 মো.শহিদুল ইসলাম:

*প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা ছিলো জুলাই ২০২১
*প্রকল্পের কোন তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা হয়না
*প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৬৭%
*প্রকল্পের কাজ ঠিকমত মনিটরিং কর হয়না

বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষায় আধুনিকায়নে জোর দিলেও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছেনা। নির্বাচিত মাদরাসাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে শেষ হবার কথা ছিলো ২০২১ সালের জুনে কিন্তু ২০২৩সালের সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত কাজ হয়েছে মাত্র শতকরা ৫৭ ভাগ। এর মধ্যে প্রকল্পের সময় এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আরেক দফা বাড়ানোর তোরজোর চলছে। সরকার মাদরাসা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আধুনিকায়ন কারার  জন্য ৬হাজার ৩শ‘১৪কোটি ৪ লাখ ২৬হাজার টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা বাস্তাবায়িত হলে দেশের মাদরাসা শিক্ষা ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

এই প্রকল্পে মূল কাজ হচ্ছে ভৌত আবকাঠামোর উন্নয়ন। ৩০০ সংসদীয় আসনের ১৮০০ মাদরাসার আবোকাঠামোর উন্নয়ন করা। অথাৎ প্রতিটি সংসদীয় আসনে ৬টি মাদরাসার ভৌত আবকাঠামোর উন্নয়ন। এতে একজন সাংসদ সদস্য ৬টি মাদরাসা উন্নয়ন করতে পারবেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের মাদরাসা শিক্ষার বিপ্লব ঘটবে। মাদরাসাগুলোতে আধুনিকতার ছোয়া লাগবে, শিক্ষকরা পাবে প্রশিক্ষন।
প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মোট মাদরাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ৬৭ ভাগ। মাঠ পর্যায়ে দরপত্র আহবান করা হয়েছে ১হাজার ৬৯৫টি। মাঠ পর্যায় কাজের কার্যদেশ প্রদান করা হয়েছে ১হাজার ১৬০টি, কার্যদেশ দেয়া হয়েছে কিন্তু কাজ শুরু হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা৭৯টি। মাঠ পর্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু ১হাজার ৫৮১টি তার মধ্যে শতকার শতভাগ কাজ  হয়েছে ৬৪৪টি প্রতিষ্ঠানের। বাকী ৪৪২টি প্রতিষ্ঠানের  (৭৬ থেকে ৯৯) ভাগ কাজ করা হয়েছে । ৫১ থেকে ৭৫ ভাগ নির্মাণ কাজ করা হয়েছে ২৬০টি প্রতিষ্ঠানেরর, ২৬ থেকে ৫০ ভাগ নির্মাণ কাজ হয়েছে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানের। ৯৬টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ হয়েছে মাত্র ১ থেকে ২৫ ভাগ।

তবে প্রকল্পটি  গত মজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়া ১০০টি মাদরাসায়   আসবাবপত্র সরবরাহ করার কথা ছিলো কিন্তু তাও করতে পারিনি। তারা মাত্র ৭১টি মাদ্রাসায় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রকল্প থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেয়া একটি অন্যতম প্রধান কাজ হলেও তারামাত্র ১১দশমিক ৭০ ভাগ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অথাৎ প্রকল্প থেকে ৫বছরে মাত্র ১হাজার ৫৩জন শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। মোট ৯হাজার শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেয়ার কথা রয়েছে।
 মূলত প্রকল্পটি শুরু হয়েছিলো প্রত্যোকটি সংসদীয় আসনে ৬টি করে মাদ্রসার উন্নয়ন করার জন্য । যাতে সারা দেশের ৩০০ আসনের ১৮শ‘ মাদরাসার উন্নয়ন হয়। কিন্তু উপজেলাগুলো খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অনেক আসনের মাদরাসার কাজ সময় মত সম্পূর্ণ হয়নি।

ঢাকা জেলায় ২০টি সংসদীয় আসন রয়েছে সে হিসাবে ১২০টি মাদরাসার কাজ হওয়ার কথা কিন্তু ঢাকা মহানগরী হওয়া জমির দাম বেশি বলে মাদারসা কর্তৃপক্ষ ৪তলা বা ৬তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করতে চায় না। এ জন্য ঢাকা শহরে মাদরাসা নিমার্ণের সংখ্যাও কম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা জেলায় মোট ১৯টি মারদাসার কাজ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬টি মাদরাসার কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে এবং এ মাদরাসার গুলো কর্তৃপক্ষের কাছে  হস্তান্তর করা হয়েছে। মাদারাসা গুলো হলো যাত্রাবাড়ী থানাধীন জহিরুন্নেছা দাখিল মহিলা মাদরাসা,রমনা থানাধীন নয়াটোলা এ ইউ মডেল কামিল মাদরাসা, বাড্ডা থানাধীন সাতারকুল দ্বীন মোহাম্মদ মহিলা দাখিল মাদরাসা,দক্ষিন থানাধীন হলান ইসলামিয়া মাদরাসা, খিলগাাঁও দাসেরকান্দি দারুচ্ছন্নাহ সাইয়োদিন দাখিল মাদরাসা, সবুজবাগ বাসাবো দারুল উলুম সাইয়োদিনা দাখিল মাদরাসা। এ ছাড়া বাকী ৯টি মাদরাসার কাজ (৫০-৯০)% মধ্যে রয়েছে এবং বাকী ৩টি মাদরাসার নির্মাণ কাজ ৩০% নিচে।

সরে জমিনে  রমনা থানাধীন নয়াটোলা এ ইউ মডেল কামিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, ৬তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ  কাজ শেষ করা হয়েছে গত ২২জানুয়ারি এখন পযর্ন্ত আসবাবপত্র দেয়া হয়নি। এ বিষয় এ ইউ মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. রেজাউল হক বলেন, আমাদের মাদরাসার কাজ শেষ হয়েছে অনেক দিন হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী  উদ্বোধন করে গেছেন কিন্তু এখনো আমরা আসবাবপত্র পাইনি। প্রকল্প থেকে বলা হয়েছে আসবাবপত্রের টেন্ডার করা হয়েছে, পরে দেয়া হবে।

জেলা পর্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলায় ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ছয়টি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। এসব ভবন নির্মাণে দুই বছর কার্যাদেশের মেয়াদ ২০২০ সালেই শেষ হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদফতর আর ঠিকাদারদের সমন্বয়হীনতার কারণে দীর্ঘ দিন ঝুলে আছে সরকারের শিক্ষাবিভাগের বিশেষ এ প্রকল্পের কাজ। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা কমছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্বগ্রহণের পর ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এ প্রকল্পের আওতায় জেলা সদরে ছয়টি মাদরাসায় চারতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদফতর এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকির দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ফেনী আলিয়া কামিল মাদরাসা, আফতাববিবি ফাজিল মাদরাসা, বিরিঞ্চি ছুফিয়া নুরিয়া আলিম মাদরাসা, ছনুয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, চরকালিদাস ছোবহানিয়া দাখিল মাদরাসা ও লক্ষীপুর বায়তুল আমিন ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা। প্রতিটি ভবন নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছনুয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার একটি কক্ষে সেন্টারিং-সামগ্রী রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ২০২১ সালের মধ্যে তিন তলার ছাদ ঢালাই দেয়া হয়। এরপর কাজ বন্ধ রয়েছে কয়েক মাস। বিরিঞ্চি ছুফিয়া নুরিয়া মাদরাসায় দু’জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। ল²ীপুর বায়তুল আমিন ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার জসিম উদ্দিন জানান, নতুন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। কবে নাগাদ বুঝে পাবেন তা তার জানা নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদাররা তাকে কিছু জানায়নি।

এ দু’টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবির-আইমন এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো: আনোয়ার হোসেন জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, মাদরাসা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত টাকা ছাড় দিতে শিক্ষা প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ গাফিলতি করেছে। এর ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা খুবই কঠিন। বিরিঞ্চি ছুফিয়া নুরিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মু. ইয়াছিন জানান, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দরজা-জানালা, টাইলস লাগানো বাকি রয়েছে। মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে ঠিকাদার জানিয়েছে।

ফেনী আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। যার ফলে এখনো ওই ভবনে পাঠদানের পরিকল্পনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিনেও ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল। 

এ বিষয় প্রকল্প পরিচালক মো.দীন ইসলাম(অতিরিক্ত সচিব) বলেন, আমি এ প্রকল্পে এসেছি বেশি দিন হয়নি । তার মধ্যে গেল করোনা,তারপরও চেষ্ঠ করছি প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়া জন্য। এখনও অনেক উপজেলায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আমি প্রায়ই নির্মাণ কাজ মনিটরিং করার জন্য উপজেলাগুলোতে যাই কিন্তু ফেনী সদর উপজেলায় আমি গিয়েছিলাম। সেখানের কোন সমস্যার কথা আমার জনা নেই এবং কেউ আমাকে কিছু বলেনি।