চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসে সিট দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ সময় ছাত্রাবাসের অন্তত ১২টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। কক্ষ থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলা হয় বই-খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী। সংঘর্ষে জড়ানো একটি গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং অপরটি সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। দুপক্ষই সংঘর্ষের জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহেনা আক্তার পুলিশ ও বিবদমান দুই গ্রুপের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে সন্ধ্যায় বৈঠক করেন। পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ যুগান্তরকে বলেন, বৈঠক থেকে বিবদমান গ্রুপগুলোক ছাত্রাবাসে যারা যে অবস্থানে আছে, সে অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আসন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ২৩ মার্চ পরবর্তী বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু ২২ মার্চ পর্যন্ত চমেক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষা রয়েছে। তাই ছাত্রাবাস খালি করা বা শিক্ষার্থীদের আসন পুনর্বিন্যাস করার সুযোগ নেই। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি।
জানা যায়, চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রধান ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রাবাসটির দুটি ব্লক রয়েছে। এর একটিতে নওফেল অনুসারীদের আধিপত্য রয়েছে। আরেকটিতে রয়েছে আ জ ম নাছির অনুসারীদের। তবে পুরো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র রাজনীতি, ছাত্রলীগের কমিটি ও সংসদ রয়েছে নাছির অনুসারীদের হাতে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর আ জ ম নাছির উদ্দীন ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ ইউনিটটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন এবং এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। নাছির অনুসারীরা অভিযোগ করেন, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কোতোয়ালি আসনের এমপি এবং পরবর্তী সময়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তার অনুসারীরা আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক সময় শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষ হলেও বেশ কিছুদিন ধরে চমেকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যেই সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রাবাস থেকে নওফেল অনুসারীরা নাছির অনুসারীদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। একপক্ষ অপর পক্ষের ওপর হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। ভাঙচুর করে ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ। কক্ষের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় শিক্ষাসামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর এক ঘণ্টা পর ছাত্রাবাসে যান চমেকের অধ্যক্ষ শাহেনা আকতার। পরে তিনি ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে পুলিশসহ দুই গ্রুপের চারজন প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক করেন।
বিকালে ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায়, সামনের আঙ্গিনায় হকিস্টিক, ভাঙা চেয়ার, বালিশ-বিছানাপত্র, ছেঁড়া অবস্থায় বইপত্র-ক্রেস্ট পড়ে আছে। দ্বিতীয় তলায় সাধারণ পাঠকক্ষের জানালার কাচ, চেয়ার-বইয়ের তাক ভাঙচুর করা। পাঠকক্ষের ভেতরে ইটের টুকরা ও লাঠি রয়েছে। বিভিন্ন কক্ষে খাট, বইয়ের তাক, টেবিল-চেয়ারসহ আসবাবপত্র এবং বিছানাপত্র এলোমেলো। কয়েকটি কক্ষের দরজা-জানালাও ভাঙা।
নওফেল অনুসারী ৫৮তম ব্যাচের এমবিবিএস শিক্ষার্থী ইমন সিকদার যুগান্তরকে বলেন, হোস্টেলের সিট নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত। ইন্টার্ন যারা আছেন তাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা থাকলেও তারা হল ছাড়ছেন না। নানারকম বাহানা দিয়ে হলে থাকছেন। ফলে আমরা যারা আছি গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়ায় তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা হলেন : ৫৮তম ব্যাচের তৌফিকুর রহমান ইয়ন এবং ৬০তম ব্যাচের মুকতাদির আহমেদ ও শাওন দত্ত।
নাছিরের অনুসারী চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসেফ বিন ত্বাকী রিফাত বলেন, ‘দীর্ঘদিন চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতি আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণে। হঠাৎ করে ছাত্রশিবির করে আসা কিছু লোকজন নিজেদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা নিজেদের নওফেল ভাইয়ের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আবার নওফেল ভাই বলছেন, ক্যাম্পাসে ওনার কোনো গ্রুপ নেই। তাহলে আমাদের প্রশ্ন: ক্যাম্পাসে যারা ওনার নামে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন-তারা কারা?’
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL