‘সালাম’ দিয়ে ছিনতাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাধারণত পূর্ব পরিচিত হলে বা হূদ্যতা প্রকাশ করতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা একে অপরকে সালাম দেন।  আর এই সালাম দেওয়াকে পুঁজি করে রাজধানীতে ছিনতাই কার্যক্রম চালাচ্ছিল একটি চক্র।  টার্গেট করা ব্যক্তিকে চলতি পথে সালাম দিয়ে গতিরোধ করে পরিচিত হওয়ার ভান করে প্রথমে সময়ক্ষেপণ করত তারা।  এর মধ্যে আশপাশে ঘাপটি মেরে থাকা আরো কয়েকজন এসে ঘিরে ধরতো।  তারপর হুমকি বা ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুট করে নিত। 

গত ২১ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক ভবনের সামনে সালাম দিয়ে পথ আটকে লুৎফর রহমান নামে একজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।  শেরেবাংলা নগর থানায় দায়েরকৃত এই মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  তারা হলেন- মো. পিন্টু মিয়া ও মো. সুমন। 

গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।  তিনি বলেন, রাজধানীতে নতুন উপদ্রপের বিষয়টি দেখা গেছে।  চক্রের সদস্যরা ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে টার্গেট ব্যক্তিকে পথে সালাম দিয়ে পথ আটকায়।  সাধারণত সালাম দিলে পরিচিত ভেবে মানুষজন একটু থামে, চক্রের সদস্যরাও তাদেরকে থামিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।

আশপাশে তাদের অন্য সদস্যরা ঘাপটি মেরে বসে থাকতো।   তখন তারাও এসে টার্গেট ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে সঙ্গে যা আছে দিয়ে দিতে বলে।   হুমকি দিয়ে কাজ না হলে অস্ত্র আছে বলে ভয়ভীতি দেখায়।  এভাবে টার্গেট ব্যক্তির সবকিছু নিয়ে সটকে পড়তো তারা। 

ডিসি বলেন, যেহেতু তাদের কাছে কোনো অস্ত্র থাকতো না, সাধারণ মানুষের মতোই ঘোরাফেরা করতো, তাই তাদেরকে চিহ্নিত করে ধরাটা কঠিন ছিল।  যেহেতু তাদের সঙ্গে কোনো আলামত নেই। 

সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট আগারগাঁও ডাক ভবনের সামনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এভাবে ৮০ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।  মামলাটির তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুইজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।  তারা দুইজনই ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে। 

ডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্য পরিচয়ে চাঁদাবাজি করা মো. এনায়েত শেখ ও আব্দুর রহমান মুন্সি নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

যাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি থাকতো এবং নিজেদের র্যাব সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন।  তারা কারওয়ানবাজার মাছের আড়তে শ্রমিকদের কাছে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে।  টাকা না দিলে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।  বিষয়টি শ্রমিকরা পুলিশকে জানালে ভুয়া র্যাব সদস্য দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পথে কেউ সালাম দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে চাইলে যেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন সবাই।  কোনোভাবেই দাঁড়ানো যাবে না, বা এমন হলে পুলিশকে বিষয়টি জানাবেন।  অনেক প্রতারক ওয়াকিটকি সঙ্গে রেখে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছে।  এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।