১৯-এপ্রিল-২০২৪
১৯-এপ্রিল-২০২৪
Logo
অর্থনীতি

খাদ্য আমদানিতে ফিরেছে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৮-১৯ ১৭:৩১:২৩
...

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলেছে।  কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য।  একেবারেই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় হাঁসফাঁস করছে মানুষ।  তবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটা সমঝোতা হওয়ায় আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বস্তির আভাস দেখছেন ব্যবসায়ীরা।  এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত।  এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে শিগগির আরো গম, ভুট্টা, সরিষা ও মসুর ডাল আনার প্রক্রিয়া চলছে।   

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া।  এরপর কৃষ্ণসাগরের সব বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল।  তবে গত মাসে হওয়া চুক্তির আওতায় ১ আগস্ট ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর ছাড়ে শস্যবাহী প্রথম জাহাজ।  এটিই ইউক্রেনের গমের প্রথম চালান।  বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ গমের চাহিদা পূরণ হয় দেশ দুটি থেকে।  রাশিয়ার হামলার পর সাগরপথে এতদিন ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি বন্ধ ছিল।  

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া থেকে ৩ লাখ টন গম আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে সরকার।  এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে রাশিয়া।  বৈঠকে গম আমদানি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও গম রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। 

আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১১০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে।  বাংলাদেশের গমের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।  সূর্যমুখী তেলের ৮০ শতাংশই আসে দেশ দুটি থেকে। বাংলাদেশের মোট ভুট্টার চাহিদার ২০ শতাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।  বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর ৫০ লাখ টন ডিজেল, ১৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, দুই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং এক লাখ ২০ হাজার টন অকটেন আমদানি করে।  যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম উঠেছিল ১১৫ ডলার পর্যন্ত। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল।  দেশে বছরে গমের চাহিদা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টনের মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। 

এই গম প্রক্রিয়াজাত করে ময়দা, আটা, সুজিসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে।  রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করা পণ্যের মূল্য ইতোমধ্যে বেড়েছে।  উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েছেন।  

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি।  আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য, যার বেশিরভাগই খাদ্যপণ্য।  এর আগের বছর রাশিয়ায় বাংলাদেশ রপ্তানি করেছিল ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য, অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য।  বিশেষ করে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।  ভুট্টার ২০ শতাংশ আসে এই দুটি দেশ থেকে।  আবার তৈরি পোশাক রপ্তানির নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রাশিয়াকেও।  বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে তাদের ব্যবসার ওপর।  

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েজুর রহমান বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকায় দেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।  যুদ্ধের কারণে বেড়েছে তেলের দাম।  যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।  তবে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে গম আমদানিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় কিছুটা স্বস্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে।  অপর গম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস কে রেজা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর শাহিন রেজা বলেন, গম আমদানির বিষয়ে সরকার পর্যায়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।  রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলেও দেশে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে।  তাই দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরো সময় লাগবে। 

রাশিয়া থেকে গম আমদানির বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থ বিনিময়ের বেশ কিছু জটিলতা থাকার কারণে আমদানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা ছিল।  সম্প্রতি সে জটিলতা কেটে যাওয়ায় আমদানির পথ খুলেছে।  তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া থেকে তিন লাখ টন গম আমদানির আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।   এখন গমের সঙ্গে ভুট্টা, সরিষা ও মসুর ডাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।  এই ধারা অব্যাহত থাকলে বর্তমান বাজারের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী।