২২-নভেম্বর-২০২৪
২২-নভেম্বর-২০২৪
Logo
আন্তর্জাতিক

বান্দরবান সীমান্তে গোলাবর্ষণে দায়ি আরাকান আর্মি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৯-১৯ ১৮:৫৩:৪৭
...

বান্দরবান সীমান্তে গোলাবর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার এর দায় ঠেলে দিয়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির প্রতি।  দেশটির দাবি, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে যাতে করে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে।

সীমান্তে গোলাবর্ষণের প্রতিবাদে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করার পর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে এই ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।  গতকাল রোববার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খোরশেদ আলম সাংবাদিকদেরকে এসব কথা বলেন। 

বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে মিয়ানমার সেনাদের।  এ লড়াইয়ের মধ্যে মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া বেশ কিছু মর্টার শেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া চারটি মর্টার শেল এসে পড়ে।  এতে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন।  আহত হন রোহিঙ্গা শিশুসহ পাঁচজন। 

এসব ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মোট চারবার তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।   সবশেষ তলব করা হয়। মিয়ানমারের দূত কী বলেছেন, সেটি তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, অং কিউ মোয়ে দাবি করেছেন, এগুলো (গোলাবর্ষণ) আসলে এটা একটা দুর্ঘটনা। 

রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, মিয়ানমার আর্মি বলছে আরাকান আর্মি তাদের গুলি অস্ত্র চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে।  যাতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়।  বাংলাদেশ যাতে মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে। আসলে কে দায়িত্ব নেবে তা নিরূপণ করা আসলে কঠিন।  তারা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েও গোলা পাঠিয়ে থাকতে পারে।  তারা (মিয়ানমার) অনেক সময় এটাও বলে থাকে বা এমন দোষও দেয়, আরাকান আর্মি আমাদের এখান থেকে গিয়ে হামলা করে। 

 

ঢাকার উদ্বেগের বিষয়ে মিয়ানমারের দূত কী বলেছেন- এই বক্তব্য তুলে ধরে খোরশেদ আলম বলেন, রাষ্ট্রদূত আমাদের তেমন কিছু জানাননি।  উনি জানিয়েছেন, আমাদের এই বক্তব্যগুলো নেপিডোকে জানাবেন।  এই প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বলেছি, হ্যাঁ, এটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।  আপনারা এটা সামলাবেন।  এটা যেনো কোন ভাবেই বাংলাদেশের সীমান্তের এপারে ছড়িয়ে না পড়ে।  এ বিষয়ে সতর্ক হবেন।  এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মিয়ানমারকেই গ্রহণ করতে হবে।  এটা তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, মিয়ানমারের কোনা গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।   সেটা সেখার দায়িত্ব মিয়ানমারের।  বাংলাদেশ সবসময়ই দায়িত্বশীল ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র।  আমরা অনেকদিনই ধৈর্য ধরে এই বিষয় দেখে আসছি।  আমরা তাদের বলেছি, আপনারা দ্রুত আপনাদের সমস্যা সমাধান করুন। যাতে আমাদের এখানে আর রক্তারক্তি না হয়।  আমাদের এখানে যেন কোনো প্রাণ আর না যায় ।

সচিব বলেন, এক্ষেত্রে আমরা যে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছি, তাতে কোনো উইকনেস বা দুর্বলতা নেই।   যা অনেকেই নতজানু বলে থাকে তার কোনো কিছুই আমাদের বক্তব্যে নেই।   সেই ধরনের কথাই আমরা বলছি, যা আমাদের শক্ত অবস্থানকেই তুলে ধরে। 

তবে সীমান্তে মিয়ানমার সেনা মোতায়েন করলেও এপাবে এখনও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে বাংলাদেশ।  আপাতত এর বাইরে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কথা বললেন পররাষ্ট্র সচিব।   জানান, সীমান্তে এখনই সেনা মোতায়েনের কথা ভাবা হচ্ছে না। 

তিনি বলেন, সকল গোয়েন্দা সংস্থা, বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডকে সতর্ক করা হয়েছে।   মিয়ারমা থেকে যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  আমরা আজ উচ্চ পর্যায়ের একটা মিটিংও করেছি।   বাংলাদেশের যত প্রকার এজেন্সি আছে, তাদের নিয়ে। আমরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে বলে দিয়েছি বর্ডারে সজাগ থাকতে।   তারা তাদের প্রয়োজন মতো সদস্য যেখানে যতটুকু প্রয়োজন তা মোতায়ন করবে।  এ ছাড়া কোস্টগার্ডকে বলেছি সাগর দিয়েও যেন কোনো রোহিঙ্গা বা অন্য কারও কোনো অনুপ্রবেশ না ঘটে। 

এদিকে, মিয়ানমারের এই আচরণ নিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানেও যাবে বাংলাদেশ।   ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আসিয়ানের যে রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় আছেন তাদের ডেকে এই ঘটনার র্ব্িরফ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  যাতে তাদের আমরা জানাতে পারি. বারবার প্রতিবাদ জানিয়েও মিয়ানমারের সমস্য সমাধান করা যাচ্ছে না।  মিয়ানমার এই বিষয়ে যে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।  প্রতিবেশী হিসেবে আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা এভাবে এসব ঘটনা থেকে কীভাবে মিয়ানমারকে বিরত রাখা যায়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাব।