চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে চলমান কৃষক অসন্তোষের ফলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এর মধ্যেই মোদি সরকারের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা এসেছে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দিয়ে জানান, বেনামি নির্বাচনী বন্ডের ফলে নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার হরণ হচ্ছে। ফলে সংবিধানের ১৯ (১) (ক) ধারা ভঙ্গ হচ্ছে। তাই অবিলম্বে এ প্রকল্প প্রত্যাহার করতে হবে।
২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা চালু করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। সরকারের দাবি ছিল, এর ফলে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ হবে। নির্বাচনী তহবিলে স্বচ্ছতা আসবে। তবে, মামলার বিরোধিতা করে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিল, রাজনৈতিক দল কে, কার কাছ থেকে কত টাকা পাচ্ছে, তা জানার অধিকার ভোটারদের থাকতে পারে না।
আর মামলাকারীদের বক্তব্য, অস্বচ্ছতা থেকেই যাচ্ছে। পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যবস্থা চালু নেই। কোন করপোরেট সংস্থা কোন দলকে অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে কী সুবিধা আদায় করছে, তা জানার উপায় থাকছে না। এ ছাড়া, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া যেহেতু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন, তাই সরকার সব তথ্য জানার অধিকারী। সে ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো দাতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে অবিলম্বে এ ব্যবস্থায় অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করে দিতে হবে। এতদিন ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বন্ড মারফত কার কাছ থেকে কত টাকা সংগ্রহ করেছে, কোন দল কার কাছ থেকে কত অর্থ পেয়েছে, সব জানাতে হবে।
চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত বন্ড মারফত রাজনৈতিক দলগুলো যত অর্থ সংগ্রহ করেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সিংহভাগই (প্রায় ৯০ শতাংশ) পেয়েছে শাসক দল বিজেপি। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফমর্সের (এডিআর) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভারতের জাতীয় দলগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও করপোরেট সংস্থা থেকে ৮৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থিক অনুদান পেয়েছে। এর শীর্ষে রয়েছে বিজেপি। এই অর্থের মধ্যে শুধু তাদেরই প্রাপ্তি হয়েছে ৭১৯ কোটি ৮০ লাখ রুপি। পক্ষান্তরে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৮০ কোটি রুপির মতো।
রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন, দুটি কারণে রাজনৈতিক দলকে অর্থ দেয় দাতারা। একটি কারণ সমর্থনের জন্য। আবার ওই সাহায্যের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক দেওয়া–নেওয়াও হতে পারে। বিচারপতিরা বলেন, কালো টাকা বন্ধের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। দাতাদের স্বার্থ রক্ষার দাবিও সমর্থনযোগ্য নয়।
রায়ে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে দাতা ও গ্রহীতাদের সব তথ্য অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সেসব তথ্য ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে তুলে দিতে হবে, যাতে সবাই সব জানতে পারে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL