২৬-নভেম্বর-২০২৪
২৬-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ক্রিকেট

অবিশ্বাস্য হারে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৯-০২ ১৭:১৮:৫১
...

অবিশ্বাস্যভাবে শ্রীলংকার কাছ হেরে এশিয়া কাপের ১৫তম আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলো গত দুই আসরের ফাইনালিষ্ট বাংলাদেশ। 

আজ উত্তেজনাপূর্ণ ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকা ২ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশকে।  গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হারলেও, বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ে সুপার ফোরের টিকিট পেল শ্রীলংকা।  আর গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচ হেরে শূণ্য হাতে এশিয়া কাপের মিশন শেষ করলো সাকিব আল হাসানের দল।  ফলে এই গ্রুপ থেকে সুপার ফোর নিশ্চিত করলো আফগানিস্তান ও শ্রীলংকা। 

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।  আগের ম্যাচ থেকে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।  এনামুল হক বিজয় , মোহাম্মদ নাইম ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ দেয়া হয় সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নতুন মুখ এবাদত হোসেনকে। 

আগের ম্যাচের দুই ওপেনার একাদশ থেকে বাদ পড়ায় এবার বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন মিরাজ ও সাব্বির।  পরিসংখ্যান মতে  গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ১৩টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের নবম উদ্বোধনী জুটি এটি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগে কখনও ইনিংস ওপেন করেননি তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা সাব্বির।  আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একবারই ইনিংস শুরু করেন মিরাজ।  গত ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে লিটন দাসের সাথে ইনিংস শুরু করে ১২০ রানের জুটি গড়েছিলেন মিরাজ।ম্যাচে ৩২ রান করেছিলেন  মিরাজ। 

এ ম্যাচের প্রথম বলে লেগ-বাই থেকে চার পায় বাংলাদেশ।  পঞ্চম বলে ৩ রান নেন মিরাজ।  আর শেষ বলে প্যাডল-স্কুপ শটে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন সাব্বির।  এতে প্রথম ওভার থেকে ১১ রান পায় বাংলাদেশ।  দ্বিতীয় ওভার থেকে মাত্র ৩ রান আসে।  আর তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নেন সাব্বির।  শ্রীলংকার হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পেসার আসিথা ফার্নান্দোর বলটি পুল শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৬ বলে ৫ রান করা সাব্বির। 

দলীয় ১৯ রানে সাব্বির ফিরলেও, ভড়কে যাননি মিরাজ।  চতুর্থ ওভারে ১টি ছক্কা, পঞ্চম ওভারে ১টি করে চার-ছয় মারেন তিনি।  পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশ পায় ১৮ রান।  পাওয়ার প্লের শেষ ওভার থেকে মিরাজের ১টি চারে ৮ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।  ফলে ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৫৫ রানে।  এসময় ২টি করে চার-ছক্কায় ২৪ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন  মিরাজ। 

পাওয়ার-প্লে শেষ হবার পরের ওভারেই বিদায় ঘটে মিরাজের।  শ্রীলংকার স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভার করা ঐ ওভারের পঞ্চম বলটি ছিলো গুগলি।  তাতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলে  ২৬ বল খেলে ২টি করে চার-ছক্কায় টি-টোয়েন্টি  ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা  মিরাজ বিদায় ঘটে।দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক সাকিবের সাথে ২৪ বলে ৩৯ রান তুলেন মিরাজ।  জুটিতে ১৫ বলে ২৮ রান করেন মিরাজ। 

মিরাজের আউটে ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম।  শ্রীলংকার পেসার চামিকা করুনারত্নে বাউন্সার সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৫ বলে ৪ রান করা মুশফিক।  এতে ৮ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৬৩ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। 

৫ রানের ব্যবধানে মিরাজ ও মুশফিক ফিরলে, বাংলাদেশের রান তোলার গতি কমে যাবার শংকা ছিলো।  কিন্তু সেটি হতে দেননি সাকিব।  চার বলের ব্যবধানে তিনটি চার মারেন তিনি।  এরমধ্যে নবম ওভারের প্রথম দুই বলে স্কুপ শটে বাউন্ডারি আদায় করে সাকিব।  ওভারের শেষ বলে চার মারেন আফিফ হোসেন।

তবে ১১তম ওভারে থামতে হয়ে সাকিবকে।  শ্রীলংকার স্পিনার মহেশ থিকশানার মিডল-স্টাম্পের বলটি জায়গা করে কভার দিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-বলের সংযোগ করতে না পেরে বোল্ড হন সাকিব।  ৩টি চারে ২২ বলে ২৪ রান করেন সাকিব।  এই ইনিংস খেলার পথে টি-টোয়েন্টিতে ছয় হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব।

১১তম ওভারে দলীয় ৮৭ রানে ফিরেন সাকিব।  এরপর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন আফিফ।  ১৩তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন আফিফ।  ঐ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ১শতে পৌঁছায়। 

আফিফ মারমুখী মেজাজে থাকলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী  ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।  নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম ১২ বল থেকে মাত্র ৮ রান নিতে পারেন রিয়াদ।  অবশেষে ১৫তম ওভারে সাবধানতার খোলস থেকে বের হন মাহমুদুল্লাহ।  ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও পরের ডেলিভারিতে চার মারেন তিনি।  তাতে ওভার থেকে ১৪ রান পায় বাংলাদেশ। 

১৬তম ওভারে মারমুখী মেজাজ অব্যাহত রাখেন আফিফ।  তার ১টি করে চার-ছক্কায় ১৫ রান পায় বাংলাদেশ।  ফলে ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৩৮ রান। 

বাউন্ডারি দিয়ে ১৭তম ওভার শুরু করেছিলেন আফিফ।  কিন্তু চতুর্থ বলটি লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি।  আফিফের দারুন ইনিংসটি থামে ৩৯ রানে।  ২২ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন আফিফ। 

আফিফ ফিরলেও বাংলাদেশের রান সামনের দিকে টেনে নেয়া দায়িত্ব বর্তায় মাহমুদুল্লাহর কাঁধে।  কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে হাসারাঙ্গার বলে সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ।  আউট হওয়ার আগে ২২ বলে ১টি ছক্কায় ২৭ রান করেন টাইগারদের সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। 

মাহমুুদুল্লাহ ফেরার পর দু’টি চার মারেন মোসাদ্দেক হোসেন।  ১৯তম ওভারে মাহেদি হাসানকে হারালে মাত্র ৭ রান পায় বাংলাদেশ।  তবে শেষ ওভারে ১৭ রান তুলেন মোসাদ্দেক ও তাসকিন।  তাসকিন ১টি ছক্কা ও মোসাদ্দেক ২টি চার মারেন।  ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় রান ১৮৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। 

৯ বলে ৪টি চারে  ২৪ রানে অপরাজিত  থাকেন  মোসাদ্দেক।  ৬ বলে ১টি ছক্কায় অপরাজিত ১১ রান করেন তাসকিন।  শ্রীলংকার হাসারাঙ্গা-করুনারতে ২টি করে উইকেট নেন। 

১৮৪ রানের টার্গেটে শুরুটা সাবধানী ছিলো শ্রীলংকার।  প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১৩ রান পায় তারা।  তবে দ্বিতীয় ওভারেই শ্রীলংকার ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ।  কিন্তু তাসকিনের বলে ক্যাচ ফেলেন মুশফিক।

মুস্তাফিজের করা ইনিংসে চতুর্থ ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা।  সাকিবের পরের ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৮ রান তুলেন কুশল মেন্ডিস।

তিন বোলার ব্যবহার করেও প্রথম পাঁচ ওভারে শ্রীলংকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গা না গেলে, ষষ্ঠ ওভারে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পেসার এবাদত হোসেনকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক সাকিব। 

নিজের অভিষেক ওভারেই বাজিমাত করেন এবাদত।  ডাবল উইকেট নেন তিনি।  তৃতীয় বলে নিশাঙ্কাকে বাউন্সারে আউট করেন এবাদত।  আর শেষ বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে মিড অফে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন চারিথা আসালঙ্কা।  ফলে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪৮ রান পায় শ্রীলংকা।  নিশাঙ্কা ২০ ও আসালঙ্কা ১ রান করেন। 

নিজের দ্বিতীয় ওভারেও উইকেটের দেখা পান এবাদত।  অবশ্য এই উইকেটের পেছনে বড় অবদান তাসকিনের।  ২০ মিটার দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন তিনি।  এবাদতের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন গুনাথিলাকা।  ফাইন লেগে সেই ক্যাচ নেন তাসকিন।  ১১ রান করেন গুনাথিলাকা। 
এবাদতের আঘাতের পরের ওভারে উইকেট শিকারে মাতেন তাসকিন।  এবাদত যেখানে বাউন্সারেই তিন উইকেট নিতে পারেন, সেখানে বাউন্সারে শ্রীলংকার চতুর্থ উইকেট তুলে নেন তাসকিন।  তাসকিনের অফ-স্টাম্পের বল র‌্যাম্প শট খেলে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন ২ রান করা  রাজাপাকসে।  এতে ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা।  সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৩৫ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরান কুশল ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা।  এরমধ্যে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল। 

১৫তম ওভারে কুশলকে তুলে নেন মুস্তাফিজ।  আবারও এই উইকেট পেছনে বড় অবদান রাখেন তাসকিন।  ফিজের স্লোয়ার কাটারে র‌্যাম্প শট খেলেন কুশল।  এবারও থার্ড ম্যান থেকে দৌঁড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন তাসকিন।  ৩৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬০ রান করেন কুশল।  এরপর   হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে তুলে নেন তাসকিন। 

এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে ৪৩ রান দরকার পড়ে  শ্রীলংকার।  হাতে ছিলো ৪ উইকেট।  তবে লংকানদের আশা টিকে ছিলো শানাকার জন্য।  ক্রিজে সেট হয়ে বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে অনায়াসে রান তুলছিলেন তিনি।  তবে ১৮তম ওভারে মাহেদির পঞ্চম বলে মিড-অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৩৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রান করা শানাকা। 

শানাকার আউটে ম্যাচ হারের পথে ছিটকে পড়ে শ্রীলংকা।  শেষ ১৩ বলে ২৬ রান দরকার ছিলো তাদের।  তবে অষ্টম উইকেটে ৭ বলে ১৩ রান তুলে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন দুই বোলার করুনারতে ও থিকশানা।

এবাদতের করা ১৯তম ওভার থেকে দু’টি চারে শ্রীলংকা ১৭ রান পায়।  তাতেই ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় শ্রীলংকা।  কারন শেষ ওভারে জিততে ৮ রান দরকার পড়ে লংকানদের। 

ওই ওভারের পঞ্চম বলে সাকিবের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন  ১০ বলে ১৬ রান করা করুনারত্নে। 

মাহেদির করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে লং-অন দিয়ে স্লগ সুইপে চার মারেন ফার্নান্দো।  আর তৃতীয় বলে দুই রান নিয়ে ম্যাচের স্কোর সমান করেন ফার্নান্দো।  পরে ঐ ডেলিভারিটি থার্ড-আম্পায়ার নো-বল কল করলে, ১ রান পেয়ে যাওয়ায় ১৮৪ রানের টার্গেট স্পর্শ করে ফেলে শ্রীলংকা।  দশ নম্বরে নেমে ৩ বলে ২টি চারে ম্যাচ জয়ী ১০ রান করেন ফার্নান্দো।  বাংলাদেশের এবাদত ৩টি, তাসকিন ২টি উইকেট নেন।