২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
জাতীয়

আস্থা নেই জাপায়, শঙ্কায় আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১২-১৩ ১৪:৪৮:০৭
...

এম এ বাবর:

নির্বাচনে অংশ নিলে কোন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও ভোটের দিকেই এগোচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবুও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সমলাচনা ছাড়ছে না দলটির। ভোটে যাবে তবে, জোটে না জোটের বাইরে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
ভোটে যাওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগ সরকারে প্রতি বেশ কিছু দাবিও রয়েছে জাপা’র শীর্ষ নেতাদের। এই দাবি পূরণ না হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ব্যাপক আলোচনা চলছে দলটির ভেতরে বাইরে।
এর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে, এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ শাসক দলের প্রধান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না। মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে ছিলেন এমন দুইজন মন্ত্রী মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওই দুই মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের বিষয়েও কথা বলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা থেকে সরে যেতে ব্যবস্থা নিতেও তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
মন্ত্রীদের অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে কী করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ, তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (শাদ এরশাদ) ও মসিউর রহমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রেখেছে। তারা কখন কী করবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর নির্বাচন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। নির্বাচন হবেই। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা থেকে সরে দাঁড়ানো ঠিক হবে না।
অন্যদিকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাপা নির্বাচন করার জন্যই এসেছে, নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য নয়। নির্বাচন হলো সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ। যেহেতু এবার নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, সেই ভোট আমরা পাব আশা করে নির্বাচনে এসেছি। ভোটাররা আস্থা রাখতে পারে এমন পরিবেশ হলে এবার আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। গতকাল মঙ্গলবার বনানীর পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন  রওশন এরশাদ। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে।
বৈঠক শেষে জাপা’র সাবেক মহাসচিব মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের কর্মকান্ডে আমাদের সমর্থন নেই। তিনি জোর করে জাতীয় পার্টি দখল করেছেন। দলের আড়াই থেকে তিনশ’ নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন জোট না হয় সে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি দলীয় পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলটি ২৮৯ আসনে প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ছে। এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা আশা করেছি, একটা আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। দেশের মানুষ সে নির্বাচনে স্বতঃস্ফুর্ত ভোট দিতে পারবে। আমরা সেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রক্রিয়া যুক্ত আছি। তবে আমরা একটা পরিবেশ আশা করেছিলাম যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেই আস্থা এখনও পুরোপুরি আসে নাই।
সূত্র জানায়, সা¤প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি কয়েক দফায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৭ জানুয়ারির ভোটে আসন ভাগাভাগি নিয়েই মূলত সেসব বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জাপা চায় তাদের চাহিদামতো ২৩টি আসন থেকে ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ সরিয়ে নেওয়া হোক, যাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা সহজে জিতে আসতে পারেন। এই দাবি পূরণ না হলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও নিতে পারে। কারণ, জাপা’র প্রার্থীরা, বিশেষ করে দলটির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে চিন্তিত। কেননা, আওয়ামী লীগ এখনো আসন ছাড়ের বিষয়ে তাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মিডিয়া থেকে দূরে থাকা এবং নির্বাচন নিয়ে প্রায় এক মাস নীরব থাকা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টির এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আসন ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে ৭০টি আসন চায় দলটি। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের আলোচনার কথা স্বীকার করেনি।

তবে চুন্নু বলেন, আমরা একটি জিনিস চেয়েছি নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের কাছে। সেটি হচ্ছে নির্বাচনের পরিবেশ যেন সুষ্ঠু হয়, ভোটাররা যেন আস্থা রাখতে পারে। এটাই আমাদের মূল দাবি। এটি হলেই আমাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যদি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় এবং ভোটাররা ভোট দিতে আসতে পারেন, তবে এবারে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

তিনি বলেন, পশ্চিমারা নির্বাচনের বিষয়ে যেসব কথা বলছে সেটা এদেশের মানুষের মনের কথা, আমাদেরও মনের কথা। যদিও আমরা চাই না বাইরের কেউ আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলুক। তবে এ সুযোগটি আমরা করে দিয়েছি, আমাদের কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিরা করে দিয়েছেন। ভোটের লড়াইয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সামনে আরও বৈঠক হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,সবাইকে প্রতিদ্বন্ধিতাকরে নির্বাচনে জিততে হবে। প্রতিদ্বন্ধিতা আমরাও করব, শরিকদেরও করতে হবে। প্রতিদ্বন্ধিতার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদ্বন্ধিতা করেই নির্বাচনের রেজাল্ট আনতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করছে, এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে বিনা প্রতিযোগিতায় কারও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিদ্ব›দ্বী যেই হোক, তার সঙ্গেই প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ–আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যাবিনেটে যা হয়েছে, এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়। ক্যাবিনেট শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা বলেছেন। এটা আমরা এখনো নিশ্চিত না। এটা সব কাগজেরও নিউজ না। আজও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে।

জাতীয় পার্টিকে কোনো আসন ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন,প্রতিদ্বন্ধিতা তাদের করতেই হবে। অপ্রতিদ্বন্ধিতা হিসেবে সিট (আসন) ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদ্বন্ধিতা করেই তাদের আসতে হবে।