নিজস্ব প্রতিবেদক
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে অন্যান্য খাতের ভাতাও। সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাও একইভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা কেবল বিজয় দিবসের দিনে বিশেষ ভাতা পেলেও নতুন করে স্বাধীনতা দিবসেও ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ দুটি বিশেষ দিনের ভাতার হারও দ্বিগুণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। সবগুলো খাতের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে অর্থ বছরে (২০২৪-২৫) অতিরিক্ত দুই হাজার ৮৭০ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে।
বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে যে হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে তাতে চলতি (২০২৩-২৪) অর্থ বছরে সরকারের ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত হারে ভাতা বাড়লে নতুন করে দুই হাজার ৮৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থ বছরে দরকার পড়বে আট হাজার ৫৬৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে দুই লাখ সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ২০ হাজার টাকা হারে সম্মানী বাবদ ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে মাসিক সম্মানী ৩০ হাজার করা হলে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের দরকার হবে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ আগে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড সভায় প্রধানমন্ত্রী ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদানের নির্দেশনা দেন। পরে ওই বছর জুলাই থেকে ২০ হাজার টাকা হারে ভাতা প্রদান শুরু হয়। বর্তমানে এ হারে তারা সম্মানী পেয়ে আসছেন।
দুই লাখ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য (শহীদ পরিবার, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত) ১২ হাজার ৫৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাটাগরিভিত্তিতে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার হারে উৎসব ভাতা পেয়ে আসছেন। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসব ভাতা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য দরকার হবে ২০০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
চলতি অর্থ বছরে ৯৮ হাজার ৫৭০ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে ৫ হাজার হারে বিজয় দিবসের বিশেষ ভাতা বাবদ ৭০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এ ভাতা দ্বিগুণ হলে অতিরিক্ত ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দরকার পড়বে।
স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধায়ের কোন বিশেষ ভাতা দেওয়া হয় না। নতুন করে এ দিবসে ১০ হাজার টাকা হারে ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে আগামী অর্থ বছরে ৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার দরকার পড়বে।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ওয়ারিশ মিলে মোট উপকারভোগী দুই লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জনকে ২০০০ টাকা হারে চলতি অর্থ বছরে নববর্ষ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত রয়েছে। আগামী অর্থ বছরে ৫ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য ৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত দরকার হবে।
বর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার উপকারভোগী ৫৮২ জন। বীরশ্রেষ্ঠ ৩০ হাজার, বীর উত্তম ২৫ হাজার বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক ২০ হাজার হারে ভাতা পাচ্ছেন। এজন্য চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ ১৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাবে বীর উত্তমদের ৪০ হাজার, বীর বিক্রম ৩৫ হাজার ও বীর প্রতীক ৩০ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী প্রদানের করা বলা হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা লাগবে।
শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাটাগরিভিত্তিতে ২৭ হাজার থেকে ৪৫ হাজার সম্মানী পান। এজন্য চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ রয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে সম্মানী বাড়িয়ে ক্যাটাগরিভিত্তিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে লাগবে অতিরিক্ত ৭০ কোটি টাকা।
দাফন, সৎকার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও লাশ পরিবহনের ব্যয় বাবদ সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৯০০ টাকা দেওয়া হয়। এ খাতে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ও ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা যেহেতু বাজেট সংশ্লিষ্ট এই মুহূর্তে এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- শহীদ পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সম্মানী বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে কমিটিকে অবহিত করা হয়।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL