২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
জাতীয়

এগিয়ে চলছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু রেল সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৮-২৬ ১৯:০৬:৫৭
...

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর চালুর পর এবার জাপানের হাত ধরে এগিয়ে চলছে স্বপ্নর বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ।  এটি হবে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু।  ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১১টি পিলার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।  এরই মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ।  যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।  চলবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যাত্রীবাহী ট্রেন আর পণ্যবাহী ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে।  বড় এই প্রকল্পের  কাজ শেষ হলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরো গতি আসবে। 

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল ধরার কারণে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।  ২০২০ ডিসেম্বর থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।  এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এই রেল সেতু সহায়তা করবে।  বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে।

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে কনটেইনার ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে।  নতুন সেতু দিয়ে দৈনিক ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বাড়ানো যাবে।  আর পণ্য পরিবহন বাড়ানো যাবে ১৬০ শতাংশ।  ফলে দৈনিক মালবাহী ট্রেনে সাড়ে ৩২ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। 

প্রকল্প সূত্র জানায়, আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে রেল সেতুটি।  বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডব্লিউ) স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে।  সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে।  ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। 

সেতুটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পুরানো রেল লাইন তুলে নেওয়া হবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।  রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাপানি অর্থায়নের জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ কাজ করছে।  নতুন সেতুতে ডবল লাইনে ট্রেন চলাচল আরো সহজ হবে বলে জানায় নির্ভরযোগ্য সূত্র ।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী  মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ২০১৪ সালে এর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের একটি রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।  এর দুই বছর পর ২০১৬ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প।  গত ৫ বছরে অগ্রগতি হয়েছে ৩৮ শতাংশ।  বাকি ৬২ শতাংশ শেষ করতে ব্যয় তিন দফা ও সময় এক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে।  অথচ সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। 

রেল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানান, এই প্রকল্প অনুমোদনের চার বছর পর ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৪০ শতাংশ।  অথচ সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।  তা সম্ভব্য না হওয়ায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।  ২০২০ সালের মার্চে সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন হয়।  তবে গত ৫ বছরের প্রকল্পের ব্যয় তিন দফা ও সময় এক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি জাপানের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে।  জিওবি ফান্ডের প্রকল্প থেকে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পে সময় একটু বেশি লাগে।  কারণ প্রকল্পের সব বিষয়ে তাদের সম্মতি আনতে হয়।  এতে অনেক সময় চলে যায়।  এই প্রকল্পে ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।  ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করতেই চার বছর সময় চলে গেছে।  পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।  তাই ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। 

প্রায় চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।  এর মধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।  বাকি চার হাজার ৬৩১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। 

২০১৪ সালে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৬৭ কোটি টাকা।  ওই বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় ব্যয় নির্ধারণ করা হয় আট হাজার ২৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।  পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদনের সময় প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা।  বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় আরো সাত হাজার ৭২ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে প্রকল্পের  মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

দুটি প্যাকেজে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।  দুই অংশে আলাদা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।  সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করছে ওবায়শি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন এবং জেএফই।  এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ছয় হাজার ৮০১ কোটি টাকা।  আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ।  এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ছয় হাজার ১৪৮ কোটি টাকা ।

সেতুর উভয়প্রান্তে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল পথ) নির্মাণ করা হবে।  এ ছাড়া সাত দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ ও লুপ লাইনসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।  নদীশাসন কাজের পুনর্নির্মাণের ব্যয় রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।  যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুটি চালু করা হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন।  কিন্তু সেতুটি চালুর সাত বছরের মাথায় ফাটল ধরা পড়ে।  ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট কম্পনের ফলে এই ফাটলে সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

পরবর্তীতে যমুনা সেতুর ফাটল মেরামত করা হলেও ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়।  পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ রয়েছে সেতুটি দিয়ে।  এই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।  ২০১৬ সালে ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় প্রকল্পটি পাস হয়।  প্রকল্পটির আওতায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৩০০ মিটার উজানে প্রায় চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ডুয়েলগেজ স্টিল ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। 

প্রকল্প সূত্র জানায়, যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে যমুনা রেল সেতু।  এ জন্য তিন দশমিক ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে।  পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফরম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। 

রেল সেতুর পূর্বপাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।  এ ছাড়া সেতু বিভাগ থেকে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।  তবে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় নদীশাসন করায় এ খাতে এখন আর ব্যয় হবে না।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাপানি কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডসহ যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানিকে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বলে জানা গেছে।