নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর যানজট নিরসন ও নগরবাসীর নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের অন্যতম যুগোপযোগী এক পদক্ষেপ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পের প্রথম অংশের (কাওলা-ফার্মগেট) উদ্বোধন হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। এরই মধ্যে এর সুফল সবচেয়ে ভালো অনুভব করতে পারছেন উত্তরাবাসী।
এই মুহূর্তে পুরোদমে এগিয়ে চলছে কারওয়ান বাজার-মগবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের কাজ। খুব শিগগিরই খুলছে এই অংশের প্রথম র্যাম্প যা দিয়ে নামা যাবে কারওয়ান বাজারের সড়কে।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার নিশ্চিত করেছেন এক্সপ্রেসওয়ের কারওয়ান বাজার মুখ খোলার দিন। তিনি বলেছেন, চলতি মাসের ১৫ তারিখের আগেই র্যাম্পটি খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে র্যাম্পটি পরিদর্শন করে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
এ এইচ এম এস আকতারের ভাষ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে কাজ চলছে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ অংশে। এখানে সোনারগাঁও হোটেলের পাশে একটা ওঠার সংযোগ সড়ক হবে।
এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) প্রধান ফটকের সামনে নেমেছে নতুন র্যাম্পটি। র্যাম্পের নির্মাণকাজ শেষ। সড়ক ও ফুটপাতের মাঝখানে দেয়াল ঢালাই চলছে এখন। সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা সহকারী বুলবুল আহমেদ বলেন, গত মাসেই (ফেব্রুয়ারি) কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসে এটি খুলে দেওয়া হবে।
এর মধ্য দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৬তম র্যাম্প খুলবে। এর আগে বিমানবন্দর-সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ওঠানামা মিলিয়ে ১৫টি র্যাম্প খুলে দেওয়া হয়েছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার সংযোগ সড়ক থাকবে মোট ৩১টি। কাওলা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত এ এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তবে ৩১টি র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যানবাহন নামার কারণে বর্তমানে ফার্মগেট ও ইন্দিরা রোডে চাপ রয়েছে। কারওয়ান বাজারের র্যাম্প খুলে দিলে মতিঝিল ও দক্ষিণমুখী যান তখন এই র্যাম্প ব্যবহার করবে। এতে ফার্মগেট ও ইন্দিরা রোডের চাপের বড় অংশ কারওয়ান বাজার ও আশপাশের সড়কে চলে আসবে।
ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, কারওয়ান বাজারের র্যাম্প চালু হলে আশপাশের সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এখানে ওঠার একটি সংযোগ সড়ক চালু হলে যানজট কম হবে। ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা র্যাম্পটি পরিদর্শন করার পর তারা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষকে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।
এই পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে মিড আইল্যান্ড (সড়ক বিভাজক) অনেক নিচু হয়েছে। এতে গাড়ি চাইলে বিভাজক পেরিয়ে উল্টো পথে যেতে পারবে, যা
চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করবে। এ জন্য বিভাজক উঁচু করতে বলা হয়েছে। যেখানে ইউটার্ন আছে, সেটি বন্ধ করে অন্যত্র করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যানজট নিরসনে সবচেয়ে বড় এই মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর-সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়া হয় যান চলাচলের জন্য। মোট ১৫টি র্যাম্প আছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, খুলে দেওয়ার পর থেকে গতকাল ৪ মার্চ সকাল ৬টা পর্যন্ত ৬০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮টি যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
টোল বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আপাতত টোল বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। তবে, পুরোপুরি চালু হলে টোল বাড়তে পারে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL