দেশে ডলার সংকট বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এর প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে। বিশেষ করে পণ্য আমদানিতে ডলার সংকটের প্রভাব ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ডলার সংকটের কারণে গত দুই বছরে পুরাতন জাহাজ ভাঙা শিল্পে বিনিয়োগ বেশ কমে গেছে। দেশে প্রতিবছরে অন্তত ৩০ লাখ টন পুরাতন জাহাজ ভাঙার জন্য আমদানি করে ৬০টি প্রতিষ্ঠান। আর এ খাত থেকে সরাসরি রাজস্ব আসে প্রায় হাজার কোটি টাকা। জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে শুল্ক ও ট্যাক্সে কাটছাঁট চান তারা
উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বেশ জায়গা করে নিচ্ছে জাহাজ ভাঙা শিল্প। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে অন্তত ৩০ লাখ টন জাহাজ আমদানি করে বাংলাদেশের ৬০টি শিপিং ইয়ার্ড। যেখান থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা কাস্টমস ডিউটি পায় সরকার। আর এ খাতে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪৭টি পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে, সেগুলোতে লোহার পরিমাণ ৯ লাখ ৭১ হাজার টন। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হওয়া ২০০ জাহাজে লোহার পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ এক বছরে লোহার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২১৪টি জাহাজ আমদানি করা হয় যেখান থেকে ২৫ হাজার টন লোহা পাওয়া যায়। এর আগে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে সবচেয়ে কম ১০৯টি জাহাজ আমদানি হয়েছিল। সেগুলো ভেঙে পাওয়া গিয়েছিল ৫ লাখ ৭৯ হাজার টন লোহা। পুরোনো জাহাজ শিল্পে এ অবস্থা চলতে থাকলে ঝুকিতে পরবে এ খাতের সাথে জড়িত প্রায় ২০ হাজার লোক।
দেশে পুরনো জাহাজ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর আমদানি করে সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলবর্তী জাহাজভাঙা কারখানাগুলো। তারা পুরনো জাহাজ আমদানির পর সেগুলো ধাপে ধাপে কেটে বিক্রি করে। জাহাজভাঙার পর প্লেট, লোহার টুকরা, সরঞ্জাম ইত্যাদি লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে ১০৮টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ইয়ার্ড রয়েছে, যা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। এই ইয়ার্ডগুলোর মধ্যে কার্যরত রয়েছে ৫০টি। এদের বার্ষিক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা এক কোটি মেট্রিক টনের বেশি। বাংলাদেশের বার্ষিক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৪ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশের মোট আয়রন (লোহা) চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প থেকে। এ শিল্পের ওপর ৩০০টিরও অধিক রি-রোলিং স্টিল মিল নির্ভরশীল।
একটি জাহাজ আমদানির পর তার ওজন নির্ধারণ হয় ভাসমান অবস্থায়। ভাঙা জাহাজের কিছু অংশ ব্যবহার হয় অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ছোট জাহাজ তৈরিতে। তবে বেশিরভাগ অংশই দেশের ইস্পাত শিল্পের চাহিদা মেটায়। জাহাজের প্রতিটনে আমদানি শুল্ক ১ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর ভেতরে থাকা তেল ও আসবাবপত্রসহ আনুষাঙ্গিক আরও কিছু পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ হয়।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য শাহীন আলম টিপু বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে গত দুই বছরে তাদের বিনিয়োগ বেশ কমে গেছে। তাই আমদানির ওপর মূল শুল্ক রেখে বাকিটায় কাটছাঁট চান তারা’।
তিনি বলেন, ‘ওজন দেখার পর টনের হিসাব করে টাকা দেওয়ার পরও অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে ব্যবহƒত ও অব্যবহৃত জাহাজ থেকে একই পরিমাণ শুল্ক নেওয়া হচ্ছে।’
তবে গত মঙ্গলবার প্রাক বাজেট আলোচনায় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, দেশে জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগের বিপরীতে বড় কোনো অগ্রগতি দেখছেন না তিনি। তাই ছাড়ের আগে ভেবে দেখতে চায় এনবিআর।
বাজেট আলোচনায় আরও বেশকিছু খাতে ট্যাক্স ও শুল্ক কমানোর দাবি নিয়ে হাজির হয় সিঅ্যান্ডএফ, শিপিং, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং, ট্যাক্স লইয়ার্স ইন্ডেন্টরসহ বেশ কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠন।
DP-MA
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL