বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন। নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে এবারের জনশুমারি যথাযথ হয়েছে কি না এ নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছিল।
শুমারির তথ্যানুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার কমছে। এবারের শুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ শতাংশ। যা ২০১১ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ১.৪৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ১.৫৮ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ছিল ২.০১ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ছিল ২.৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ শুমারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে।
২০০১ সালে দেশে জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। ১৯৯১ সালে ছিল ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জন। ১৯৮১ সালে ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন এবং ১৯৭৪ সালের প্রথম শুমারিতে দেশে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন।
এবারের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী দেশে তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৫৯ জন। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে মুসলিম সংখ্যা বেড়ে ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে যা ২০১১ সালে ছিলো ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আবার হিন্দু জনগোষ্ঠী ২০১১ সালের ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ২০২২ সালের জনশুমারিতে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সামান্য করে কমেছে বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের হারও।
জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫৫ দশমিক ৮৯ ভাগ মানুষ এখন মোবাইল ফোন আর ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এর বাইরে চট্টগ্রামে ৩ কোটি ৩২ লাখ, রাজশাহীতে ২ কোটি ৩ লাখ মানুষ বাস করছেন এবং বরিশাল বিভাগে দেশের সর্বনিম্ন ৯১ লাখ মানুষ বসবাস করছেন।
দেশে সাক্ষরতার হার এখন ৭৪.৬৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি। প্রতিবেদনে সাক্ষরতার হারের হিসাবে বলা হয়, দেশে নারী-পুরুষ মিলে ৭ বছর বা এর ওপরে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১.৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১.২৮ শতাংশ। নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬.৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২.৮২ শতাংশ এবং ট্রান্সজেন্ডারের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৫৩.৬৫ শতাংশ। সাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৭৮.০৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে ৬৭.০৯ শতাংশ। ২০১১ সালে নারী-পুরুষ মিলে সাক্ষরতার হার ছিল ৫১.৭৭ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস গত বছর জুনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো এবং ওই প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিলো যে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার (২০২১ সালের জানুয়ারি)। অথচ গতকাল বিবিএস জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলছেন দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন।
কর্মকর্তারা বলছেন, জনশুমারি দশ বছর পরপর হলেও প্রতি বছরের তথ্য সমন্বয়ের জন্য স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস তৈরি করে বিবিএস। তবে নির্ধারিত কিছু এলাকার মৃত্যু, বিয়ে, আগমন বা বহির্গমনসহ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে জনমিতি সম্পর্কিত সূচক সমূহ প্রকাশ করার কারণেই জনসংখ্যার তথ্যে কম বেশি দেখা যায়। জনশুমারির পাশাপাশি গৃহগণনা ও আর্থিক অবস্থাসহ ৩৫ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
অবশ্য এবারের এই জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ যথাযথ হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি পরিকল্পনা এম এ মান্নান স্বয়ং স্বীকার করেছিলেন যে, এবারের মানুষ গোনার কাজে অবহেলা হয়েছে।
গতকালও প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জনশুমারিতে ভুল থাকতে পারে স্বীকার করে সেটি দেখিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, জনশুমারি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে। তবু আমাদের ভুল থাকতেই পারে। আপনারা সেটি দেখিয়ে দিন। আমরা সংশোধন করব।
এদিকে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চলছে নানান বিশ্লেষণ। জনসংখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। মূলত মেয়েদের জীবনের আয়ুষ্কাল বেশি হওয়া এবং অভিবাসনকেই তিনি নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ মনে করেন। দেশে নারীর সংখ্যা বেশির আরেকটি কারণ হতে পারে অভিবাসন। দেশ থেকে এক কোটিরও বেশি মানুষ বিদেশে গেছে। এর মধ্যে দৃশ্যত পুরুষের সংখ্যাই অনেক বেশি।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ব্রিটিশ আমলে, ১৮৭২ সালে। পরের আদমশুমারি হয় ১৮৮১ সালে। এরপর থেকে এই উপমহাদেশে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয় ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রতি ১০ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালে না হয়ে একবছর পিছিয়ে যায়।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ। প্রতি ১০ বছরে অন্তত দুই কোটি জনসংখ্যা বাড়ে বলে ধারণা করা হয়। দুই হাজার এগার সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের সীমান্ত এলাকায় আদমশুমারি করে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL