এম এ বাবর:
সময়ের সাথে পরিবর্তনের ধারায় ‘উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। যার যাত্রা শুরু হলো ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এরই মধ্যে গত এক যুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। এবার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সূচনাও হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আর এ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভায় আসছে তরুণ ও স্মার্ট নেতারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ফলে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। আর শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন বিশ্বরাজনীতিতে। বিশ্বে শেখ হাসিনাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান। এরই মধ্যে চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
নানা শঙ্কা, আতঙ্ক ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রবিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে রাত ২টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে আওয়ামী লীগ ২২৫, স্বতন্ত্র ৬২, জাতীয় পার্টি ১১, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছে। ময়মনসিংহ-৩ আসনে ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করায় আওয়ামী লীগের জয় ও পরবর্তী সময়ে সরকার গঠন অনেকটা নিশ্চিত থাকলেও নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ছিল।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারত, রাশিয়া, চীন, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান ও ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত এবং মরক্কোর রাষ্ট্রদূত ও ডিন অব দ্য ডিপ্লোমেটিক কোর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সোমবার গণভবনে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আগা খান ডিপ্লোমেটিক রিপ্রেজেনটেটিভের প্রতিনিধিরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান তারা। রাষ্ট্রদূতরা এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে নিজ নিজ দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও জাপান থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা। গতকাল ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।
পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন সাবেক কংগ্রেসম্যান মি. জিম বেটস, নির্বাচন পর্যবেক্ষক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক টেরি এল ইজলে ও আমেরিকার দ্য হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) চিফ অব স্টাফ আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে। এ সময় যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও জাপান আসা পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
পর্যবেক্ষক দল জানায়, আমরা বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। গতকাল আমরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় মোট ২০টি ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশের ভোট হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আলেকজান্ডার বার্টন গ্রে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে বিরত ছিল এবং একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশকে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলে পরিবেশ আরও সুন্দর ও আনন্দময় হতো।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখতে পেয়েছি, তাদের ভোট দিতে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দল দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয়ভীতি দেখা যায়নি। এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য ভালো ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে আলেকজান্ডার বলেন, কোনো দল অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি রাজনৈতিক ইস্যু। তাই এ বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষক হিসাবে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আমরা অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বলতে পারি। আমরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শুনেছি। সরকারি দলের প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা অপ্রত্যাশিত। কিন্তু সামগ্রিক নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে সেসব ঘটনা খুবই নগণ্য।
অন্যদিকে টেরি এল ইজলে বলেন, যে নির্বাচন হয়েছে সেজন্য বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাতে চাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ রয়েছে যা আমরা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করি। নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে পাশে থাকার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারত, রাশিয়া, চীন, ভূটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূতগণ গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্ব স্ব দেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান তারা।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ১৩ জানুয়ারি দ্বাদশ সরকারের সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ হবার কথা রয়েছে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এ সময় নতুন মন্ত্রিসভা কবে গঠিত হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে হয়ে যাবে। নতুন সরকারের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমি বলতে পারব না।
নসরুল হামিদ জানান, সংবিধান অনুযায়ী যদি দেখা যায়, তাহলে জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল মার্কা) হবে দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দল। বাকি স্বতন্ত্ররা থাকবেন। তাদের পরিস্থিতি বোঝা যাবে আগামীতে রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় তার ওপর। স্বতন্ত্ররা বিরোধী দল হিসেবে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, সে বিষয়টি এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত শপথ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দেশ পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে দেওয়া ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনের পরদিন এটি ছিল তাদের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন।
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, এই নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে। যথারীতি ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ ও সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL