দেশে এখনও ডলার সংকট কাটেনি। বিদ্যমান সংকটের ফলে মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। ছোট আমদানি ব্যয় মেটানোসহ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলও শোধ করা হচ্ছে রিজার্ভ থেকে। দেশে চাহিদার তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম। ফলে রিজার্ভও তুলনামূলকভাবে কমছে। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার নেপথ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
তবে, গত বুধবার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ডলার সংকট কমেছে। ডলারের সংকট এখন ঠিক সে রকম নেই, রপ্তানি আয়ও খুব একটা কমেনি। দেশের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। সরকার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সেই গতি শ্লথ আছে। অর্থাৎ সঞ্চিত অর্থের ক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে। একদিকে প্রবাসী আয় কমে গেছে এবং প্রত্যাশা মতো রপ্তানিও হচ্ছে না। অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে বিশাল ধস নেমেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব বাড়াতে ডলারের দাম অল্প সময়ে মধ্যেই ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। ডলার সংকট এখনো চলমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানান, আকুর দায় পরিশোধের পর গ্রস রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এটি সমাধান করা দরকার। সমাধান না হলে আরও সমস্যায় পরতে হবে।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ে খুবই ঝামেলার কথা জানিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত মাইক্রো ফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কাউকে টাকা দিলে মানি ক্রিয়েশন হয়। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন আর নতুন তহবিল দেওয়া যাবে না। আমরা ধীরে ধীরে কেয়ারলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২৬ সালের মধ্যে আমাদের ৭৫ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেসভিত্তিক হয়ে যাবে। তাই তথ্যের জন্য অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থায় যাওয়া খুবই জরুরি।
দেশের চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি সৌদি আরব সফরের সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ সহায়তা চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন সৌদি সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, আমরা সৌদি আরব থেকে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধে ৪৫ দিন সময় পাই। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমরা তাদের বলেছি, আমাদের যদি এক বছর সময় দেওয়া হয়, তাহলে ভালো হয়। তারা বলেছে, তারা সেটি বিবেচনা করবে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সম্পাহের শেষ কার্য দিবস বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনায় তা স্থির হয়েছে ১৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশের রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের পদ্ধতি বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী তা ছিল ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। এর মানে এ সপ্তাহের মধ্যে রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে।
এছাড়া দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থার নিট রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে। এটি শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই মেথডে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার। এ দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। মূলত, প্রতি মাসে পণ্য কেনা বাবদ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার করে দায় পরিশোধ করা হয়। সাধারণত, একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ বর্তমানে শেষ প্রান্তে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এখনও ডলার সংকট বিদ্যমান। ফলে মুদ্রাবাজার পরিস্থিতি ঠিক রাখতে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল শোধ করা হচ্ছে। ছোট আমদানি ব্যয় মেটানো হচ্ছে। সেই তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম রয়েছে। ফলে রিজার্ভ তুলনামূলকভাবে কমছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই গতি শ্লথ আছে। অর্থাৎ সঞ্চিত অর্থের ক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL