নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া ব্যুরো:
সদ্য সম্পন্ন হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পর আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এই প্রথম আসনটিতে জয়লাভ করেছেন। নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু। বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভরাডুবির পর তিনি বিএনপির এক নেতাকে দুষছেন। এই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনের আশায় ছিলেন বাবলু। তিনি বলেন, এই আসনে নৌকার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক বসিয়ে দিল আওয়ামী লীগ।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু প্রায় ২ লাখ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাত্র ২ হাজার ৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। এতো কম ভোট কেন? এমন প্রশ্নে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি বিএনপির সমর্থন পেয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবারও গাবতলী উপজেলা বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছিলাম। সেই নেতা এবার আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে সেই নেতার মুখোশ উন্মোচন করব।
বাবলু বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলেও আমার লোকসান হয়নি। ঘোড়া যে দামে কিনেছিলাম, সেই দামেই বিক্রি করেছি। মাঝে চাবুকটাই আমার লাভ। এতে লোকসান হয়েছে বিএনপির। এই আসনে নৌকার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক বসিয়ে দিল আওয়ামী লীগ।
সংসদীয় এলাকা ৪২ বগুড়া-৭ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু (নৌকা), জাতীয় পার্টির এটিএম আমিনুল ইসলাম (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেস ডা. মেহেরুল আলম মিশু (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ আব্দুর রাজ্জাক (মশাল), জাতীয় পার্টি জেপি আব্দুল মজিদ (বাইসাইকেল), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট এনামুল হক (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ফজলুল হক (আম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন মো. রনি (নোঙ্গর) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী যথাক্রমে নজরুল ইসলাম মিলন (কাঁচি), আমজাদ হোসেন (চার্জার লাইট), নজরুল ইসলাম (কেটলি), সরকার বাদল (ঈগল ) এবং বর্তমান এমপি রেজাউল করিম বাবলু (ট্রাক)। বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরাজিত ১২জন প্রার্থীই তাঁদের জামানত হারিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু (নৌকা) ৯১ হাজার ২৯ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাবেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল (ঈগল) পেয়েছেন ২ হাজার ৫৯৩ ভোট।
সূত্রমতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় মহাজোট সরকারের শরিকদল জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট আলতাব আলী এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সারাদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এই আসনটিতে আইনি জটিলতায় বিএনপির প্রার্থী শূন্য হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রেজাউল করিম বাবলু বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এমন গুজব তুলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এবার বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শাজাহানপুর ও গাবতলী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১২ হাজার ২৫৮ জন। এরমধ্যে শাজাহানপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩৫ হাজার ২১ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৭২ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ২৪৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গ ২ জন। গাবতলী উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৭জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ২১১ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৬ জন। এই আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৭২টি। শাজাহানপুর উপজেলায় ৭৪টি এবং গাবতলী উপজেলায় ৯৮টি কেন্দ্র রয়েছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL