২৩-নভেম্বর-২০২৪
২৩-নভেম্বর-২০২৪
Logo
জাতীয়

ভোটে ছিল ২৮ দল, সংসদে ৫ দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০১-০৯ ১৫:০৩:১৭
...

রেজাউল করিম হীরা:

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াই করে ২৩ দলের কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি। তাদের প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ফলে দ্বাদশ সংসদে মাত্র পাঁচটি দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৩টি রাজনৈতিক দল কোনো আসন পায়নি। এদের মধ্যে তিন কিংস পার্টি তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির কোনো প্রার্থীই জামানত রক্ষা করতে পারেননি।

প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা-৬২টি আসনে। জাতীয় পার্টির ২৫০ জন প্রার্থীও জামানত হারিয়েছেন। জাপার যে ১১ জন বিজয়ী হয়েছেন তার সবগুলোই আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসন। আওয়ামী লীগ করুণা করেনি এমন কোনো আসনে দলটির কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। এছাড়া যে ৫টি দল নির্বাচনে জিতেছে আওয়ামী লীগ ওই আসনগুলো তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছিলো। এদের কেউ কেউ নৌকা প্রতীক নিয়ে আবার কেউ আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেয় ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টি (২৬৫ জন, জাকের পার্টি ২১ জন তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৬ জন, জাসদ ৬৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ৪৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ৩৮ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ জন, গণফ্রন্ট ২১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩ জন, কল্যাণ পার্টি ১৬ জন, খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫ জন, গণফোরাম ৯ জন, সাম্যবাদী দল ৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ৫ জন, মুসলিম লীগ-বিএমএল ৪ জনকে প্রার্থী দেয়। আওয়ামী লীগ বাদে যে ৪টি দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে এরা হলো- জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কাস পার্টি ১টি এবং কল্যাণ পার্টি ১টি ।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। এই ২৬ আসনের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা।

২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী থাকলেও সমঝোতার বাইরে কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জয়ী হয়েছেন। চরম বার্গেনিং করে আওয়ামী লীগ থেকে নেয়া ঢাকার একমাত্র আসনে (ঢাকা-১৮) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের জামানত হারিয়েছেন। তিনি হেরেছেন আওয়ামী লীগের অলিখিত প্রার্থী খসরু চৌধুরীর কাছে। এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে।

সর্বশেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ভোটে অংশ নিয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভোট পেয়েছিল ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে। এই তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া যেসব আসনে জাতীয় পার্টি লড়েছে, সেখানে তাদের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এর বাইরে ভোটে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর সবারই ভোট পাওয়ার হার নগণ্য।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ঐক্যের বন্ধনে থাকা ১৪ দলীয় জোটকে ৬টি আসনে নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই আবার অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দেয় । প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেন। এর ফলে ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। এরা দীর্ঘকাল ধরে আওয়ামী লীগকে সহায়তা দিয়ে আসছিলো ।

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের চাওয়া ছিল ভাগে পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ শরিকদের সেই দাবি আমলে নেয়নি। ফলে ভাগে পাওয়া ছয়টি আসনে জেতার বিষয়ে অনেকটাই অনিশ্চয়তায় ছিলেন শরিক দলের প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে হেরে তাদের সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো ।

এই নির্বাচনে তিন কিংস পার্টির আর্বিভাব ঘটেছিলো। এদের মধ্য বিএনএম অন্য জোটগুলোকে সাথে নিয়ে সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলো। আর তৃণমূল বিএনপি সংসদের প্রধান বিরোধীদল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো। এই দুটি দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে । এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট । আর চেয়ারম্যন শমসের মোবিন পেয়েছেন ১০ হাজার ভোট । অপর কিংস পার্টি সুপ্রিম পার্টিরও সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৩৮ ভোট।

আন্দোলনের কাফেলা ছেড়ে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিলো কল্যাণ পার্টি । তাদের চেয়ারম্যান ছাড়া সব প্রার্থীও জামানত খুইয়েছেন। দলটি চেয়ারম্যান জেনারেল( অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে অংশ নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার নির্বাচনকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক দেখাতে ভোটে দলের সংখ্যা বাড়াতে সচেষ্ট ছিল। তবে এসব দলের অধিকাংশেরই কোনো জনসমর্থন নেই। অতীতের নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, এবার অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দলেরই সংসদে কখনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল সবচেয়ে বেশি। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী ছিল নতুন নিবন্ধিত দল তৃণমূল বিএনপির (সোনালী আঁশ প্রতীক)। চতুর্থ সর্বোচ্চ ১২২ জন প্রার্থী ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম প্রতীক)। অন্যান্য দলের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯, জাসদের ৬৬, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ৫৬ জন করে প্রার্থী ছিলেন।

এসব দলের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জিততে পারেননি। এমনকি এসব দলের প্রার্থীরা ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেননি; বরং আলোচনায় থাকা কিছু নেতাও বড় ব্যবধানে ধরাশায়ী হয়েছেন। কোনো আসনে জয় না পাওয়া দলগুলোর প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এসব দলের অনেক প্রার্থীই ১০০ ভোটের কম পেয়েছেন।