রেজাউল করিম হীরা
জোটগতভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। আগামী দুই একদিনের মধ্যে শরিকদের আসন বন্টনের বিষয়টি সমাধান হবে। যদিও নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সকল আসনই উন্মুক্ত রাখতে চান জোটপ্রধান। তবে এবার শরিকদের চাহিদা বেশি। তারা ২৫-৩০টি আসন দাবি করলেও চারটি আসনে সবুজ সংকেত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
১৪ দলের শরিকরা বেশি আসন চাইলেও সমন্বয় করে আসন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। আজকালের মধ্যেই আসন বণ্টনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকদের বেশি আসন দাবি করতেই পারে। তারা জোট করে, তারা দল করে, দলের কাছে তো তাদের মর্যাদার একটা ব্যাপার আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা তো চাইতে পারে। কিন্তু এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে। একজনকে আমরা দিলাম, সে নট ইলেক্টেবল; সেই অবস্থায় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। সেখানে অন্য কেউ বেরিয়ে আসতে পারে।
তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সম্মানজনক আসনে ভাগ চান শরিকরা। জোট নেতাদের দাবি, জোটের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করে যেন আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
গতকাল ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠকে করেন শরিকরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, জোটের পক্ষ থেকে একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে, আগের চেয়ে কিছু আসন বেশি চেয়েছে ১৪ দল। জোটের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করে যেন আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আসন ভাগাভাগি যেন জোটের জন্য সম্মানজনক হয় সেটাই প্রত্যাশা। আমাদের এখন ১০ জন সংসদ সদস্য আছেন, প্রত্যাশা ২০ জনের।
জোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন বলেও জানান ইনু। তিনি বলেন, যেখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবেন। জোটের প্রার্থীরা নৌকা মার্কা নির্বাচন করবেন।
তবে জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
গতকাল সন্ধ্যায় ইস্কাটনের বাসায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু আসনে আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করব। আর কিছু আসনে শরিক দলগুলো নিজেদের মতো নির্বাচন করবে। একসঙ্গে নির্বাচন করা আসনগুলোয় শরিকরা নৌকা প্রতীক ব্যবহার করবে। বাকি আসনগুলোয় তাদের নিজেদের প্রতীক ব্যবহার করবে।
এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্তুদীর্ঘ বৈঠকের পরও আসন বণ্টন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠকে জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরিকত ফেডারেশনশের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ জোটের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, জোট নেত্রী উন্মুক্ত নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সকল আসনই উন্মুক্ত থাকুক। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে সবাই জিতে আসুক। শরিকেরা নৌকা প্রতীক নির্বাচন এবং আসন ছাড়ের প্রত্যাশার কথা জানান। তবে চারটি দলের প্রধানদের ৪টি আসনে ছাড় দেওয়ার সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রমতে, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরেও দল ঠিক করতে পারেননি। দলকে শক্তিশালী করেন। নতুন নতুন কত দল আসছে। এ সময় জোট নেতারা বলেন, অন্য কোনও দলের সঙ্গে মেলালে হবে না। জোটের দলগুলোর একটা আদর্শিক পরিচিতি আছে। ছোট বলেই নৌকায় নির্বাচন করতে চাই।
বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতাদের আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে। তাই জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে ১৪ দল। আসন ছাড়ের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ জন্য জোটের মুখপত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জোটের আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসন আমুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমকে জোটের দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, জোটের শরিক দলগুলোকে এবার আসন ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। সে কারণে কোনও আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করবে না দলটি। জোট শরিকদেরও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-২ বা ৩, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২ ও তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাÐারীকে চট্টগ্রাম-২ আসনে ছাড়ের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য করা হতে পারে।
১৪ দল সূত্রে জানায়, এবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আসন চেয়েছে ৮টি। বর্তমানে দলটির সংসদ সদস্য আছেন ৩ জন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আসন চায় ৭টি। এই সংসদে দলটির সংসদ সদস্য আছেন ৩ জন। তরিকত ফেডারেশনের বর্তমানে একজন সংসদ সদস্য থাকলেও এবার ৫টি আসন আশা করছে। জাতীয় পার্টি (জেপি) ৫টি আসন দাবি করলেও, বর্তমানে দলটির একজন সংসদ সদস্য আছেন। সাম্যবাদী দলের কোনও সংসদ সদস্য না থাকলেও, এবার একটি আসন চায় তারা। জোটের বাকি শরিক দলগুলোর বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই, তাদের প্রত্যাশাও কম।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে। আসন বণ্টনের বিষয়টি আমির হোসেন আমু ভাই আর ওবায়দুল কাদের বসে ঠিক করবেন বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাÐারী বলেন, নির্বাচনে জোটগতভাবে এবং নৌকা প্রতীকে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত কিছু জানানো হয়নি। আসনের বিষয় আমু ভাই কথা বলে ঠিক করবেন।
বৈঠকের বিষয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ১৪ দলের গুরুত্বটা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জোটের দরকার আছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আদর্শিক এই জোটকে এগিয়ে নিতে হবে বলেছেন তিনি। দেশে আমেরিকার আজ্ঞাবহ একটি সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা রুখে দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা।
আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে সবাই (জোট শরিকরা) বলেছেন। তবে জোটনেত্রী কিছু বলেননি। এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে বলা হয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম আসনে ছাড় চেয়েছি।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL