২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
জাতীয়

শর্তে ঝুলে আছে সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২৩-১২-১২ ১৪:৩২:৩১
...

রেজাউল করিম হীরা

আসন ভাগাভাগি নিয়ে ১৪ দলের শরিকদের পাশাপাশি সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেও আপত্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে। শরিকদের নৌকা ছেড়ে দিলেও ভোটের লড়াইয়ে থাকবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগের। সংসদের বিরোধী দলের অবস্থান ঠিক রাখতে জাতীয় পার্টিও আসন সমঝোতা চায়। যদিও দলটি তফসিলের আগে ৩০০ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়।

গত রোববার রাতে ১৪ দল শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। এ নিয়ে তিন দফা বৈঠক হলেও শরিক দলগুলোকে আসন নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস দেয়নি আওয়ামী লীগ। বৈঠকে শরিকদের ছাড় দেওয়া আসনগুলো থেকে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের না সরানোর আগের সিদ্ধান্তও পুনর্ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। একইসঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে ছাড় পাওয়া আসনের বাইরে উন্মুক্ত আসনগুলোতে শরিক দলগুলোকে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে থাকার আহŸানও জানানো হয়।

শরিকদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা পার হওয়ার আগে জানা যাবে না কোন দলকে কয়টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কেবল প্রতীক বরাদ্দের সময়ই এটা স্পষ্ট করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেওয়া আসনগুলোর শরিক দলের প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেবেন।

বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন বলেন, বৈঠকে কেবল আসন সমঝোতা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজনৈতিকভাবে ১৪ দল একসঙ্গে আছে, একসঙ্গে নির্বাচন করবে। জোটের প্রার্থীরা সবাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। বাকি আসনগুলো উন্মুক্ত থাকবে।

১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে দিনক্ষণ জানিয়ে বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ। তবে জাপার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা তা গণমাধ্যমে স্বীকার করেছিলেন। গত শনিবার রাতেও গোপনে রাজধানীর গুলশানে বৈঠক বসেছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাপা নেতারা। কিন্তু এই বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানাননি।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। জাপার পক্ষে ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু। যদিও জাপা মহাসচিব আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করলেও ধোঁয়াশা রেখেছেন।

জাপা সূত্র জানায়, তাদেরকেও ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের না সরানোর সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তবে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ‘সম্মানজনক’ সংখ্যক আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ। জাপাকে ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে নৌকা সরাতে রাজি হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায়িত্ব নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। জয় নিশ্চতে জাপা চায়, তাদেরকে যেসব আসন ছাড়া হবে, সেখানে শুধু নৌকা নয়; আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থাকতে পারবেন না। তবে ১৪ দলের শরিকদের মতো নৌকা নয়; নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে জাপা।

দলটির সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে ৬০টির বেশি আসনে ছাড় চেয়েছিল জাপা। আওয়ামী লীগ ১০-১২টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কমবেশি ৩০টি আসন ছাড়তে পারে।

জাপার দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রথমে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত দলগুলোকে আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল বানাতে চেয়েছিল। তবে দলগুলো বিএনপি নেতাদের ভাগিয়ে নির্বাচনে আনতে না পারায় এ পরিকল্পনা সফল হয়নি। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যত সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাই এমপি হোন না কেন, তাদের নিয়ে বিরোধী দল বানাবে না আওয়ামী লীগ। প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য জাতীয় পার্টিকে ফের প্রধান বিরোধী দল হতে দিতে হবে। এ কারণে হলেও জাপাকে সম্মানজনক আসন দিতে হবে। চলতি সংসদে সরাসরি নির্বাচিত জাপার ২৩ এমপি রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে ছাড় পেতে পারে বিকল্প বিরোধী দল না থাকায়।

জাপার হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চালাচ্ছেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁরা দু’জনই সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। জাপার অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা দৃশ্যপটে নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁদেরকে আলোচনার অগ্রগতি জানানো হচ্ছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় জাপার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট অথবা আসন সমঝোতা করে অংশ নিয়েছে জাপা। এবার একই কৌশল থাকবে-ইঙ্গিত দিয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অতীতে একসঙ্গে পথ চলেছি। চাইলেই তো অতীত মুছে ফেলা যায় না। পরস্পরের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। সম্মানজনক কিছু হবে বলে আশা করি।

বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা ছিল আওয়ামী লীগ ও জাপার। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় জাপা-আওয়ামী লীগের ‘আসনের অঙ্ক’ কী হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।

জাপা সূত্র জানিয়েছিল, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ’ করতে আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিবিহীন ভোটযুদ্ধ যেন একতরফা না হয়। তাই ক্ষমতাসীনরা চেয়েছিল, নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক। কিছু আসনে লাঙ্গলকে জেতানোর প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল। পরাজয়ের ঝুঁকি থাকায় ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশলে রাজি হয়নি জাপা। লাঙ্গল নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে রাজি নয়। জাপার এই অবস্থানের কারণে নৌকা সরিয়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

গত শনিবার রাতের বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও আসন ভাগাভাগির কথা হয়নি দাবি করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভোটাররা যেন একটি ভালো নির্বাচনে কেন্দ্রে আসার সুযোগ পান, তেমন পরিবেশ যেন তৈরি হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ আলোচনা হবে। একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে গেলে সময়ে সময়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারাও করে, আমরাও করি। যত বেশি ভোটার কেন্দ্রে; ততই জাপার লাভ।