এম এ রাজা, হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতাঃ
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের (ঈগল)কাছে পরাজিত হয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী। চা শ্রমিকদের এলাকা নৌকার ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত আসনটিতে এর আগে কখনো এমন বিপর্যয় ঘটেনি। নৌকার প্রার্থী মন্ত্রী হয়েও ভরাডুবি সর্বত্র একই আলোচনা।
বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলীর নৌকা প্রতীক নিয়ে কেন এই ভরাডুবি একাধিক সূত্রে জানা যায়,স্থানীয়দের মূল্যায়ন না করা, কোন প্রয়োজনে গেলে এপিএসের (ব্যক্তিগত সহকারী) সাথে কথা বলার নির্দেশ দিতেন মাহবুব আলী। ব্যক্তিগত সহকারী মোছাব্বির হোসেন ওরফে বেলালই হয়ে গেছিলেন দ্বিতীয় মন্ত্রী।
সহকারী বেলাল বা তার আত্মীয় স্বজনের মাধ্যম ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কোন ভাবেই মন্ত্রীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন না।
এরকম নানান অভিযোগের কারণেই তাকে এমন পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। চুনারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই তবে জোয়ার এসেছিল জোয়ারে সবকিছু ভেসে গেছে এই জন্যই এইরকম বিজয় হয়েছে ব্যারিস্টার সুমনের। রানীগাও ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন, আমি মন্ত্রীর কাছের লোক ছিলাম যার জন্য উনার দোষ গুণ চোখে পড়েনি এরপরও কেন এই পরাজয় বলতে পারছি না তবে এটুকু বলতে পারি ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে গণজোয়ার আসছিল এজন্যই তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ খান বলেন, প্রতিমন্ত্রী এলাকায় উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। নিজস্ব লোক দিয়ে এলাকায় তিনি মন্ত্রী লীগ গড়ে তুলেছিলেন। তার ব্যক্তিগত সহকারী মোছাব্বির হোসেন বেলাল ও তার বাবা রহম আলী অন্তত ১০/১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে বসেন। প্রতিমন্ত্রীর গোষ্ঠীর তার চাচা হেলাল মিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন মাদক ব্যবসা, সিএনজি অটোরিকশা থেকে চাঁদাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন মামলা জড়িয়ে দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধেও বেশ কয়েকটি মামলা দিয়েছেন। পুলিশ দিয়ে মামলা করিয়েছেন। ইউপি নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, মানুষ সুযোগ চেয়েছিল। এবার সুযোগ পেয়েছে। তা কাজেও লাগিয়েছে।
বহরা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন বলেন, বেশি আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী ১০ বছর কাটিয়েছেন। সব কিছু নিজস্ব লোক দিয়ে পরিচালিত করেছেন। ৪/৫ জনের গণ্ডির মধ্যে তিনি আটকে গিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রায় ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী পরাজিত হন স্বতন্ত্রপ্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে। এর আগে ২০১৪ সালে অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলী প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL