চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন ফিনিশিং টাচ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরদিনই টানেলের ভেতরে যান চলাচল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন , কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলটি যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এই ঐতিহাসিক প্রকল্পটি হচ্ছে দেশের প্রথম পানির নিচে নির্মিত টানেল। এটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলটি চট্টগ্রামকে দুই শহর নিয়ে এক মহানগর এ পরিণত করবে। মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করবে, যা কক্সবাজারকে সরাসরি চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, টানেলে ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উঁচু এবং ১১ মিটার ব্যবধানে দুটি টিউব তৈরি করা হয়েছে যাতে ভারী যানবাহনগুলি সহজেই টানেলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪০ কিলোমিটার। এটির সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডের পাশাপাশি একটি ৭৪০ মিটার সেতু রয়েছে যা মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সাথে সংযুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধান বন্দর নগরী এবং কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সাথে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দিবে। এই টানেলে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মানে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা । বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদে ৫,৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন আয়োজিত গত ২৭ সেপ্টেম্বর এক প্রস্তুতি সভায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন জানিয়েছিলেন l২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
জানা গেছে,টানেলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে ৮টি রেডিও চ্যানেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যেই ফ্রিকুয়েন্সি থাকুক না কেন, গাড়ি যতক্ষণ টানেলে থাকবে ততক্ষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ দিক নির্দেশনা চলবে।'টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টানেলে নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। টানেলে চলাচলকারী গাড়ির গতিবেগ প্রথম দিকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। পায়ে হেঁটে টানেল পার হওয়া যাবে না। একইভাবে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার যানবাহনও চলাচল করতে পারবেনা টানেল দিয়ে। নির্ধারিত ওজনের বেশি ভারী যানবাহন এ টানেল দিয়ে চলতে দেওয়া হবে না। এজন্য টানেলের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ওজন স্কেল। পরিমাপের পর বেশি হলে ওই যানবাহনকে পার হতে দেওয়া হবে না। কোন যানবাহন থেকে কী ধরনের টোল নেওয়া হবে তা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করে ফেলেছে মন্ত্রণালয়।’
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL