জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংশোধন করতে অযৌক্তিকভাবে বাড়তি কাগজপত্র না চাইতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। সেই সঙ্গে আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৩০ দিনের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেশের সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। এর আগে চলমান রাজনৈতিক সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, এনআইডিতে কোটি কোটি ভুল। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১০ লাখের মতো আবেদন জমা পড়ে আছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এই সংখ্যা। কিন্তু মাঠ পর্যায় থেকে সেগুলোর সুরাহা হচ্ছে না। ফলে নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ছে। অনেক সময় মাঠ কার্যালয় থেকে সেবাগ্রহীতার কাছে এত বেশি কাগজপত্র চাওয়া হয়, যা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এতে ভোগান্তির সঙ্গে সঙ্গে সেবা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হন সাধারণ মানুষ।
তবে মাঠ কর্মকর্তাদের দাবি, একই আবেদন নাকচ হওয়ার পর অনেকেই পুনরায় আবেদন করেন। এ ছাড়া অনেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হলে পরে আর যোগাযোগ না করায় আবেদন ঝুলে যায়। বিষয়টি নজরে আসায় নির্বাচন কমিশন আবেদনগুলো মাঠ পর্যায় থেকেই দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে চাওয়া তথ্য সংশোধন করা না গেলে বাতিল করতে হবে। সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে এবং সেখানেও কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে সেটি ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো যাবে বলেও জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যই ছিল নাগরিক সেবা আরো সহজ ও গতিশীল করা। সে লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে ক, খ, ও গ ক্যাটাগরির সংশোধনের আবেদন সংযুক্ত দলিলাদি যাচাই-বাছাইকরণ এবং প্রয়োজনানুসারে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন/বাতিল) করে নাগরিক সেবাকে গতিশীল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে বিষয়টি সামনে রেখেই এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার আওতাভুক্ত ক্যাটাগরির আবেদন পরীক্ষা করে নিজেই নিষ্পত্তি করবে। এ জন্য যথাযথ শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ বা অন্য যৌক্তিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরও অযৌক্তিকভাবে কোনো কাগজপত্র চাওয়া যাবে না।
আবেদন করার পর সেটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনে শুনানির ব্যবস্থা করা এবং যাচাই-বাছাই করে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিষ্পত্তি করবেন। সে জন্য মাঠ পর্যায়ে সপ্তাহে দুই দিন শুনানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারপর ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সেটি নিষ্পত্তি করতে হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়।
ক্যাটাগরি বিভাজনের পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার অধীনে আবেদন নিষ্পত্তি করতে ক্যাটাগরি ‘ক’ ৭ কার্য দিবস, ‘খ’ ১৫ কার্য দিবস ও ‘গ’ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের সময় পাবেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা তার আওতাধীন আবেদন নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে সেটি সঠিক কাগজপত্রসহ, সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে মহাপরিচালক, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর পাঠাতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারে ইউজার অ্যাকাউন্টটি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। সংশোধনের আবেদন নিষ্পন্নের বিষয়টি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ হতে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে জবাবদিহিও করতে হবে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, যেসব নাগরিক অনলাইনে আবেদন করতে ব্যর্থ হবেন তাদের উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে সহযোগিতা দিতে হবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL