নরসিহপুর ফেরীঘাট
নিজস্ব প্রতিনিধি
মোঃ আবুল হোসেন সরদার, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
আগে ফেরির জন্য গাড়ি বসে থাকতো। এখন গাড়ির জন্য ফেরী বসেথাকে। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে শরীয়তপুর—চাঁদপুর নৌপথে কমেছে যানবাহন ও যাত্রীর আনাগোনা। নেই যানবাহনের কোন ভিড়। এখন মৃত প্রায় নরসংপুর ফেরিঘাট। ২৭ কিলোমিটার এ মহাসড়কের পুরোই খানাখন্দে ভরা। গাড়ির অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছে ফেরি।আগে প্রতিনিয়ত এ ঘাটে যানজট লেগেই থাকত। খুলনা—চট্টগ্রামসহ দকিষন পশ্চমঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করতো এ সড়ক দিয়ে। সবসময় মহাসড়কে মনোহর বাজার, বুড়িরহাট ও ভেদরগঞ্জ বাজারসহ বালারহাট এলাকায় যানজট লেগে থাকতো। ঘাটে এলে দেখা যেত আড়াই কিলোমিটার পথ প্রায় ৬০০—৭০০ গাড়ির লম্বা সারি। প্রতিটি গাড়ি ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো দিনের পর দিন। এমন ও ময় গেছে ২/৩ দিন পরে সিরিয়াল াওয়গেছে। অথচ সেই ঘাট এখন যানবাহন শূন্য। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর থেকেই পাল্টে গেছে শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের দৃশ্যপট।
ফের ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগেও এ ঘাট ছিল যানবাহন পারাপারে ব্যস্ততা ও যাত্রীদের ব্যাপক পদচারণা। এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। ঐ ময় ৮টি ফেরিতেও যানবাহনের চাপ সামলানো যেত না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতো গাড়িগুলো। এখন চলাচল করছে ৬টি ফেরি। যার মধ্যে একটি রো রো ফেরী। আগে এ সড়কে ছোট—বড় মিলিয়ে দৈনিক ৬৫০টি গাড়ি পারাপার হতো। এতে ঘাট কর্তৃপক্ষ সরকারি মূল্যে ভাড়া আদায় করতো ১৩—১৪ লাখ টাকা। এখন দৈনিক ৯০—১০০ গাড়ি , বিশেষ ক্ষেত্রে ১৩০টি গাড়ি পারাপার হচ্ছে। তাতে ভাড়া আদায় হচ্ছে ৩—৪ লাখ টাকা। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হয়। ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে নীরবতা। নেই যানবাহন ও মানুষ। ঘাট এলাকার মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা রয়েছে। ঘাটের কাউন্টারের সামনে নেই কোনো দালালের তৎপরতা। গাড়িচালক বা হেলপারদের আগের মত হাঁকডাক নেই। ফেরি এবং নরসিংহপুর লঞ্চ ঘাটের অবস্থা ও একই। ১ ও ২ নম্বর ঘাটে একাধিক ফেরি দেখা গেলেও গাড়ি না থাকায় অলস পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, লোকের আনাগোনা না থাকায় ব্যবসায়ীদের আয়েও ভাটা পড়ে গেছে। এখানে ছোট—বড় হোটেলের টিকে আছে মাত্র ৫টি। বাকিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন জনশূন্য এ ঘাটে কেউ আর কর্মসংস্থানে আগ্রহী নয়। এদিকে গাড়ি কমে যাওয়ায় বড় একটা লোকসানে পড়েছে ঘাট ইজারাদার। প্রতিদিন ৬০০—৭০০ গাড়ি পারাপার হতো এ রুটে। এখন তা তিন ভাগের একভাগে নেমেছে এসেছে। দুপুর ১২টার দিকে ১ নম্বর ঘাটে ড. মো. গোলাম মাওলা রো রো ফেরি ভেড়ানো ছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে ফেরিটি। এর মধ্যে ফেরি ছাড়তে দেরি দেখে ফেরিতে থাকা একটি গাড়ি নেমে যায়। ফেরি থেকে নেমে যাওয়া গাড়িচালক আলী হোসেন বলেন, এ রুটে তো রাস্তার অবস্থা সুচনীয়। পুরো জায়গায় খানাখন্দ আর গর্তে ভরা। ঘাট পর্যন্ত মালামাল নিয়ে আসতে মেরুদন্ড ব্যথা হয়ে গেছে। আর ঘাটে এসে দেখি ফেরি গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছে। একের পর এক ঘাট ঘুরছি কোনো ফেরিই ছাড়ছে না। তিনি বলেন, এক সময় এ ঘাটে এসে সিরিয়াল পেতে দালালদের খপ্পরে পড়তে হতো। টাকা বেশি গেলেও পদ্মা সেতু হয়েই পার হতে হবে। এ রাসতায় আর আসবো না।
নরসিংহুর ফেরিঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী অকতার হোসেন বলেন, আগে দৈনিক শতাধিক বাস আসতো। এখন ঘাটে গাড়ি নেই বললেই চলে। দুপুরের পর কিছু মালবাহী গাড়ি আসে। এর আগে কখনো ঘাট এমন ছিল না। এখন আমাদের বেচাকেনা নাই। পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট অনেক হয়।
ঘটের ্জারাদার জিতু বপারী বলেন, আগের মত ঘটে গাড়ি নেই। আগে ফেরির জন্য দিনের পর দিন ঘন্টার পঘন্টা গড়ি সিরিয়িালে অপেক্ষা করত। এখন গাড়ির জন্য ফেরী অপেক্ষা করে। আমাদের ব্যবসায় লোসখান।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ইকবাল মাহামুদ বলেন, আগে ২৪ ঘণ্টায় শুধু এ ঘাটের এ প্রান্ত থেকে ৬০০—৭০০ যানবাহন পার হতো। এখন গড়ে ১০০ গাড়ি পার হয়। তিনি বলেন, আগে ঘাটে লাইনের পর লাইন গাড়ির সিরিয়াল থাকতো। এতে করে নানা সমস্যা ও হতো। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। গাড়ি কমে যাওয়ায় আমাদের ঘাটের আয় ও কমেছে, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। ঘাটে তিনটি ফেরি রিজার্ভে রেখে রোস্টার অনুযায়ী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। আগে ফেরির জন্য গাড়ি বসে থাকতো। এখন গাড়ির জন্য ফেরি বসে থাকে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL