২৪-নভেম্বর-২০২৪
২৪-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ঢাকা

জবির সেই অধ্যাপকের এবার প্রো-ভিসি পদে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-০২ ১৬:২৭:৩৫
...

জবি প্রতিবেদক :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তহবিল তছরুপ, রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত টাকা আত্নসাৎ, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ ২৫ টির বেশি অভিযোগে তাকে সেই দায়িত্ব থেকে অপসারন করা হয়। এছাড়া সরকারি বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার চিঠি আসে।

বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ পেয়ে মাত্র ১ বছর ১০ মাসেই ড. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে মো. আশ্রাফ উদ্দিন তামিম নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা সচিবের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ প্রো-ভিসির নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, যোগদানের পর ১ বছর ১০ মাসে তিনি ৫০০টি মাদরাসা অধিভুক্ত নবায়ন ও ২০০টি মাদরাসা অধিভুক্তি বিষয়ে পরিদর্শন, ৫০টি মাদরাসা প্রাথমিক পাঠদান বিষয়ে পরিদর্শন, ১০০টি মাদরাসা প্রিন্সিপাল-ভাইস-প্রিন্সিপালসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রতিনিধি, ৮৫০টি মাদরাসা পরিদর্শনে টিএ/ডিএ (সম্মানি) বাবদ গ্রহণ এবং প্রতিমাসে জ্বালানি বাবদ অতিরিক্ত ২০০ লিটার ব্যবহার থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে তিনি ৪০০ কর্ম দিবসে ৮৫০ টি মাদরাসা কিভাবে পরিদর্শন করলেন? একই দিনে পরিদর্শন ও অফিস করেছেন দেখানো হয়েছে, সেটি কিভাবে সম্ভব? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তিনি মাদরাসা অধিভুক্তি ও নবায়নে পরিদর্শনে গেলে গড় হিসেবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেন। আর প্রাথমিক পাঠদানের অনুমোদনের জন্য গেলে সেই টাকা গিয়ে দাঁড়ায় এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। মাদরাসার প্রিন্সিপাল-ভাইস-প্রিন্সিপাল নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে গেলেও তাকে এক লাখ টাকার নিচে দিলে নেন না। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও টিএ/ডিএ নেন।

এসব অভিযোগে ইউজিসিতে প্রো-ভিসির ব্যাংক হিসেবে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ দেয়া হয়েছে। এতে তিনি যোগদানের পর থেকে এক বছর ১০ মাসে ৭৯ লাখ ১০ হাজার ৮৪৭ টাকা জমা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ তিনি এই সময়ে বেতন-ভাতা পেয়েছেন ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭০ টাকা। শুধু গত বছরের জুন মাসেই তিনি প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা টিএ/ডিএ গ্রহণ করেন। এছাড়া তার আরো তিনটি ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখলেও বড় ধরনের লেনদেনের প্রমান পাওয়া যাবে বলে বলা হয়েছে। প্রো-ভিসির শেয়ার বাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। তার ও স্ত্রীর নামে লাখ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।

অভিযোগে আরো বলা হয়, ড. আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন মাদরাসার প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপালসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগে প্রতিনিধি হিসেবে নিজেই নিজের নামে চিঠি ইস্যু করেন। বরিশালের বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদরাসায় প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগে বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। সেখান থেকে তিনি বড় অংকের টাকা নিয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের খোশবাজার ছালেহিয়া দারুচ্চুন্নাত কামিল মাদরাসার নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঢাকায় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে তিনি ওই মাদরাসার নিয়োগ দেন। পটুয়াখালীর ‘দুমকী ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা’র গভর্নিং বডি অনুমোদন নিয়ে মামলা থাকার পরও তিনি তা অনুমোদন দেন। রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার পাইকান আকবরিয়া ফাযিল মাদরাসা, ঝালকাঠি এন. এস. কামিল মাদরাসা পরিদর্শনে নিজেই নিজের চিঠি অনুমোদন করেন। অনেক ক্ষেত্রে গভীর রাতে মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য একাধিক বার ফোন ও ম্যাসেজ দেয়া হলে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ কোন উত্তর দেননি। তবে অন্য একটি গণমাধ্যমের কাছে তিনি দাবী করেন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে এই অভিযোগ করা হয়েছে।

আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, আইনের উর্ধ্বে আমরা কেউ নই। এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য প্রমাণ পেয়ে আমরাও বিব্রত। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করেছে দেখলাম। তারা তদন্ত করে সত্য বের করুক। আমরা সর্বোচ্চ পারি সিন্ডিকেটে তুলতে।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান বলেন,
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় দেরি হচ্ছে।