২৮-নভেম্বর-২০২৪
২৮-নভেম্বর-২০২৪
Logo
ঢাকা

নাগরপুরে পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০২-১০ ১৭:০৩:১২
...

হাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইল :
চরাঞ্চলে বসত বাড়ীর পাশে ও পতিত জমিতে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে ব্যাপক সফলতা এনেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কৃষকেরা। অধিক লাভের আশায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে উপজেলার কৃষকদের । এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে ভূট্টার।

সরজমিনে,উপজেলার যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর চরে অনেক জমি বছরের পর বছর পতিত থাকে এসব পতিত জমিতে তেমন কোন ফসল চাষ করা যায় না। তবে ঐসব জমিতে ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা থাকায় চলতি মৌসুমে তারা(চাষী) চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। সেই সাথে বাড়ির পাশে ফসল কম হওয়া বা পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন অনেকেই। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে কমবেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। উপজেলার বেটুয়াজানী, গয়হাটা, বেকড়া, তেবারিয়া, ধুবরিয়া, খাস ঘুনিপাড়া, ভারড়া, সহবতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে চলতি মৌসুমে এই ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে বীজ বপনের পর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তবে ভূট্টা চাষের শেষের দিকে ভুট্টা ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। চরাঞ্চলে পলি মাটি পরে থাকা জমিতে বীজ বপনের পর থেকেই গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। প্রতিটি গাছে ০২-০৩ টি করে ভুট্টার মোর্চা ধরেছে। চাষীরা গড়ে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ভুট্টা ৯৫০-১০৫০ টাকায় বিক্রি করেন। চরের কোনো কোনো চাষী এককভাবে ৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে ভুটা চাষ করেছেন।

বেটুয়াজানী গ্রামের সৌখিন কৃষক শফিকুল ইসলাম শফি জানান, প্রায় এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ সহ প্রয়োজনীয় সকল সহযোগীতা পাচ্ছি। ভূট্টার গাছের ফলন দেখে যা মনে হচ্ছে যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে বাম্পার ফলন হতে পারে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি অবসর গ্রহণের পর থেকেই কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি এবং জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষসহ এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষ ও কাটা মাড়াইয়ে মোট খরচ হবে ২৫-৩০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে(ফলন ভাল হলে) ভুট্টা পাওয়া যাবে ৩৫-৪০ মণ পর্যন্ত। বাজার গুলোতে প্রতি মণ ভুট্টা ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা দরে বিক্রয় হয়ে থাকে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। সেই সাথে বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় এবার চাষীরা লাভবান হতে পারব বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরান হোসাইন শাকিল জানান, বাংলাদেশের বর্তমান আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে ভুট্টা চাষ এ উপজেলায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুট্টার রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। উৎপাদন খরচ কম, ফলন বেশি, বাজার মূল্যও বেশি এবং চাষাবাদে ঝুঁকি তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর ১৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬২০ হেক্টর। চলমান অর্থবছরে প্রণোদনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১০০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ভুট্টার বীজ এবং সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের মাঝে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে । গত বৎসর প্রতি হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে গড়ে ৯-১০ মেট্রিক টন ভুট্টার ফলন হয়েছে। বিপনন করতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারীরাও দক্ষ হয়ে উঠায় এ কাজে তাদের কদর বাড়ছে।

তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ ও পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হওয়ায় ভুট্টার ফলন আশানুরূপ হবে বলে বিশ্বাস করি। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে, কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে নিবিড় ভাবে কাজ করা হচ্ছে।