এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সাফের বয়সভিত্তিক আসরের দু’টি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে বাংলাদেশের প্রাধান্য গত কয়েক বছর ধরেই। সিনিয়র সাফ ও বয়সভিত্তিক দুই টুর্নামেন্টে সেরা হয়ে বাংলাদেশের আধিপত্য এখন রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল এসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ৭। নারী বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় সব দেশ অংশগ্রহণ করে না। চার দলের টুর্নামেন্টে মূলত লড়াইটা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেই হয়। বাংলাদেশ দুই টুর্নামেন্টেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভারতকে হারালেও ফাইনালে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে। দুই ফাইনালেই পিছিয়ে পড়ে সমতায় এনে আবার টাইব্রেকারে শিরোপা উল্লাস করেছে (অনূর্ধ্ব-১৯ যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন) বাংলাদেশ।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেক খেলায় অল্পতেই তুষ্ট থাকতে দেখা যায়। ফলে অনেক সম্ভাবনা সেভাবে বিকশিত হয় না। নারী ফুটবল দলে দীর্ঘদিন কাজ করা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন প্রীতি-ইয়ারজানদের এশিয়ার মঞ্চে দেখতে চান, ‘আমরা টানা দুই বার অ-১৬ পর্যায়ে মূলপর্বে খেলেছি। গতবার খুব বাজে ফলাফল হয়েছে। সেই ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করে আগামীতে যেন আমরা আবার মূল পর্বে খেলতে পারি এজন্য এখনই কাজ শুরু করা উচিৎ।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের নতুন যাত্রার শুরু ২০১৬ সালে। এএফসি অ-১৬ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সানজিদা-কৃষ্ণারা এশিয়ার সেরা আটে খেলেন। ২০১৭ ও ২০১৯ টানা দুই আসরে বাংলাদেশ অ-১৬ পর্যায়ে এশিয়ার শীর্ষ আটে খেলেছিল। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করেছিল দশ জন নিয়েও। করোনার জন্য ২০২১ সালে এই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়নি। ২০২৩ সালে এই টুর্নামেন্টের বয়স এক বছর বৃদ্ধি করে এএফসি অ-১৭ করে। সেই টুর্নামেন্টে অবশ্য বাংলাদেশের ভরাডুবি হয়েছে। মূলপর্বে যেতে তো পারেইনি, তিন ম্যাচই হেরেছে এমনকি বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তারও লক্ষ্য এশিয়ার মঞ্চে নারীদের দেখা, ‘সিনিয়র ও বয়সভিত্তিক উভয় পর্যায়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা, সেটা প্রমাণিত। এখন সব দলেরই লক্ষ্য এশিয়ান পর্যায়ে ভালো কিছু করা। সেই পরিকল্পনায় আমরা কাজ করছি।’
দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে প্রতিভা হারিয়ে যায় হর-হামেশাই। এক ব্যাচের পর আরেক ব্যাচ সেভাবে তৈরি হয় না। নারী ফুটবল অবশ্য এই উদাহরণের বাইরে। ২০১৬ সালে সানজিদা-কৃষ্ণাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। সেটার কলেবর দিনকে দিন বেড়েছে। নিয়মিত অনুশীলন ও ব্যাচের পরম্পরা বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বিশেষ জায়গায় নিয়েছে বলে মনে করেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ‘২০১৬ সালে যাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম আমরা প্রায় সবাইকে (স্বপ্না, আখি, মৌসুমীসহ আরও দুই জন ছাড়া) এখন পর্যন্ত ফুটবলের সঙ্গে ধরে রাখতে পারছি নানা সীমাবদ্ধতা ও পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেও। প্রথম সেই ব্যাচের সঙ্গে ইতোমধ্যে আরো দু’টি মেধাবী ব্যাচ যোগ হওয়ায় এখন আমাদের খেলোয়াড় সংখ্যা অনেক। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নারীদের এত নিবিড় কাজ অন্য দেশগুলোতে হয় না। মেয়েরা যেমন আন্তরিক, তেমনি আমাদের কোচিং স্টাফ এবং ফেডারেশনও। সকলের পরিশ্রমে আমরা নারী ফুটবলে একের পর এক সফল হয়েছি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে।’
সানজিদা-কৃষ্ণাদের পর আফিদা-সাগরিকা এদের পর প্রীতি-ইয়ারজানরা এসেছেন। আফিদা-প্রীতিদেরও সানজিদাদের মতো গড়ে তোলার প্রত্যয় কিরণের, ‘সানজিদা-কৃষ্ণারা এএফসির শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার আগে জাপান, হংকং ও সিঙ্গাপুরে অনেক ম্যাচ খেলেছে। বিদেশ সফর ও অনকে ম্যাচ খেলায় ওরা অনেক বেশি পরিপক্ক ছিল। আমাদের চেষ্টা পরবর্তীদেরও এভাবে গড়ে তোলার।’
২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ বাছাই থেকেই মূলত তারকা খ্যাতি পান ময়মনসিংহের বালিকা সানজিদা আক্তার। এখন তিনি ভারতের ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে নারী লিগ খেলছেন। ভারত থাকলেও অ-১৯ এবং ১৬ টুর্নামেন্টের খেলা অনলাইনে দেখেছেন। ভারত থেকে সানজিদা অনুজদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন এভাবে, ‘অনুশীলনের ফাঁকে আমি ওদের খেলা দেখেছি। ওরা ভালোই খেলে। আমরা একসঙ্গেই ক্যাম্পে থাকি। ওদের মধ্যে জিদ দেখেছি। এই জিদ থাকলে তারাও আমাদের মতো মূলপর্বে খেলতে পারবে।’
/মামুন
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL