বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ৫৪ কিলোমিটার বিস্তৃত নাফ নদী এখন মাদক, পণ্য চোরাচালান আর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মাত্র ৮ বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় মিয়ানমার সরকারের চিঠিতে বন্ধ হয়ে যায় বৈধ বাণিজ্যিক সব কার্যক্রম। গত ৮ বছরের সংঘর্ষ, সংঘাতের নীরব সাক্ষী। অথচ এ নদীর ঢেউয়ের তালে ঘুরতো এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। এখন সেখানে কেবল নিরবতা।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে থাকা এ নদী ছিল জেলেদের বেঁচে থাকার রসদ। অন্তত ১০ হাজার জেলে এখন পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জেলেদের মধ্যে একজন হ্নীলার নূর হোসেন। জীবন, যৌবনের উত্তাল সময় কেটেছে নদীর ঢেউয়ে। মাছ ধরে ৫ জনের সংসার চালিয়েছেন গত ৪০ বছর। এখন নদী পাড়ে বসে স্মৃতি রোমান্থন করে কাটছে তার সময়। পাশেই জেলেপাড়া। তার মতো সচ্ছল অনেকেরই এখন দিন কাটছে অস্বচ্ছলতায়। লাখ লাখ টাকার নৌকা আর জাল নষ্ট হয়েছে পানিতে ডুবে। জানান, বাপ দাদার হাত ধরে জেলে পেশায় এসেছেন, অন্য কওন উপায় না থাকায় কখনো কখনো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরেন। কিন্তু তাতে সংসার চালানো দায়।
হ্নীলার বলেন, ‘আমাদের পুঁজিটাই ছিল নদী থেকে মাছ মেরে অন্নের সংস্থান করা। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, বিয়ে সবকিছুতে এ নদীর ওপর ভরসা আমাদের। এখন পেট চালানোই দায়, মাছও মারতে পারি না।’ উপার্জনের তাগিদে ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন অনেকে। কেউ সিএনজি বা টমটম চালিয়ে, কেউ দিন মজুর বা শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। অভাব-অনটনের সংসারে , আয় বাড়াতে বাধ্য হয়ে মাটি কাটাসহ নানা কাজ করছেন এখানকার গৃহবধূরাও।
জেলেদের দাবি, গত ৮ বছর মাদকের চোরাচালান না কমে উল্টো বেড়েছে। জনমানব না থাকার সুযোগে নদীর কয়েকটি দ্বীপ চলে গেছে রোহিঙ্গা ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রণে। এখন তোতার দ্বীপ, লাল দ্বীপ, জালিয়ার দ্বীপসহ কয়েকটি দ্বীপে অবস্থান করছে ডাকাত দল। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে অপহরণ, খুন সবই করছে তারা। অথচ মাছ ধরতে না পেরে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
স্থানীয়রা বলেন, ‘মাছ ধরা নিষিদ্ধের পর বেড়েছে আর্থিক অনটন। বাচ্চাদের লেখাপড়াও করাতে পারছি না। নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানাই।’
কোস্টগার্ড বলছে, মাছ ধরাসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে নাফ নদীর দ্বীপ এলাকায় ডাকাতের উপদ্রব ও মাদক চোরাচালান বন্ধে তারা অভিযান চালান নিয়মিত।
টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশান কমান্ডার লে. কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক পাচার রোধে নিরলসভাবে কাজ করছেন তারা।’ এ ধরনের কোনো তথ্য থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময়, মিয়ানমার সরকার চিঠির দিলে নাফ নদীতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর এ অঞ্চলের যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক এ নদীর পাড়ের জীবনযাত্রাও থমকে যায়। দেশজুড়ে এখন যার পরিচিতি ইয়াবা, মাদক চোরাচালান আর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের নদী হিসাবে।
/মামুন
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL