বগুড়া ব্যুরো :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে এবারও হেরে গেলেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন হিরো আলম। পরাজয়ের পর হাজার টাকার নোট আর জিলাপির পোটলার ভোট হয়েছে বলে মন্তব্য করে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এই ফলাফল আমি মানিনা। ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। হিরো আলম বাংলাদেশ কংগ্রেস জোটের ডাব প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পরাজয়ের পর গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোটগ্রহণ চলাকালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা ডা. জিয়াউল হক মোল্লার (ঈগল) বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন হিরো আলম।
নির্বাচনে একেএম রেজাউল করিম তানসেন (নৌকা প্রতীক) নিয়ে ৪২ হাজার ৭৫৭ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা (ঈগল প্রতীকে) ৪০ হাজার ৬১৮ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান কাজল। তিনি ট্রাক প্রতীকে ৬১৭৮ ভোট পেয়েছেন। হিরো আলম (ডাব) ২১৭৫ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক (লাঙ্গল) ৭২৬ ভোট ও আওয়ামী লীগের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলাম মেঘ (কবুতর) ১১৯৫ ভোট পেয়েছেন।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে বিরতিহীনভাবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ভোট চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ভোটগ্রহণ চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার ডুবাতেঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে হিরো আলম অভিযোগ করেন, যেসব ভোটার কেন্দ্রে এসেছেন, তাদেরকে জনপ্রতি একহাজার টাকা দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (জিয়াউল হক) কর্মীরা। ভোট কেন্দ্রের পাশে জিলাপির পোটলা নিয়ে বসেছিল। তারা কালো টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।
ভোটারদের হাতে হাতে জিলাপির পোটলা দিয়েছে, আমার কাছে ছবি এবং প্রমাণ আছে। ছবিসহ বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি। আলোচিত এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর বলেন, লোভে পড়ে কিছু মানুষ বিক্রি হয়ে যায়। হাজার টাকার একটি করে নোট দিলে হিরো আলমের ভক্তরাও বিক্রি হয়ে যেতে পারে। টাকার লোভ এতাটাই যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিএনপি নেতার ঈগলের ভোট করেছে। অধিকংশ ভোট কেন্দ্রে ডাব প্রতীকের এজেন্ট দেখা যায়নি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, লাঙ্গল আর কবুতরের এজেন্ট নেই। আমি সব জায়গায় এজেন্ট দিয়েছি।
সামান্য দেরি হওয়ার কারণে অনেক কেন্দ্রে আমার (ডাব প্রতীকের) এজেন্টরা ঢুকতে পারেনি। কারো নানী মারা গেছে, কারো পরিবারে অসুস্থ মানুষ, এরকম সমস্যা থাকতেই পারে। এজন্যই এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি। এরআগে ভোটের প্রচারণার সময় অভিযোগ ওঠে, নন্দীগ্রাম উপজেলার মুরাদপুর বাজারে এবং কাহালু বাজার এলাকায় হিরো আলম ও তার কর্মীদের ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। হামলায় তার কয়েকজন কর্মী আহত হন। নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও কাহালু উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে বগুড়া-৪ আসন গঠিত। এখানকার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (সিংহ প্রতীক) ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন হিরো আলম। সেবার নির্বাচনের দিন কারচুপি ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে একতারা প্রতীকে একসঙ্গে দুটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ আসনের উপ-নির্বাচনেও একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ভোটযুদ্ধে রেকর্ড গড়েও মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে তীরে এসে এই প্রার্থীর তরি ডুবে যায়। জাসদের রেজাউল করিম তানসেনের কাছে হেরে গিয়ে হিরো আলমে বলেছিলেন ভোটের ফলাফল পাল্টে দিয়েছে।
অন্যদিকে বগুড়া-৬ সদর আসনে একতারা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৫৪০ ভোট। এরপর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে হামলার শিকার হন এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি একতারা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL