০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
০৩-ডিসেম্বর-২০২৪
Logo
রংপুর

নাম পরিবর্তন করে 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়' করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০১-৩১ ১৬:১৫:৩৪
...

হামিদুর রহমান, রংপুর ব্যুরো :
মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান ও ভবিষ্যতে, নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে, প্রধান বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান আহরণ; লিখিত, মৌখিক ও ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন এবং সর্বাধুনিক প্রায়োগিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে যুগোপযোগী জ্ঞান বিতরণের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মরণে নাম পরিবর্তন করে 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়' করা হয়। এটি রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল তিনটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগে ৩০০ ছাত্রছাত্রী, ১২ জন শিক্ষক, একজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস রংপুর নগরীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

রংপুর শহরের প্রবেশদ্বার মর্ডান মোড়ের নিকটবর্তী ৭৫ একর জায়গার ওপর 'বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর'র স্থায়ী ক্যাম্পাস অবস্থিত। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থায়ী ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছয়টি অনুষদ, ২২টি বিভাগ, ৫টি ইনস্টিটিউট, প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী, ১৯২ জন শিক্ষক, ১৩৪ জন কর্মকর্তা, ৪৮৯ জন কর্মচারী রয়েছে।

স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মু্যরাল, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে নিহত সব শহীদের স্মরণে নির্মিত স্বাধীনতা স্মারক এবং অস্থায়ী শহীদ মিনার।

রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, আলাদা আলাদা নামে চারটি একাডেমিক ভবন, নামাজের জন্য কেন্দ্রীয় মসজিদ, খাওয়ার জন্য ক্যাফেটেরিয়া, ছাত্রছাত্রীদের পড়ার সুবিধার জন্য মনোরম পরিবেশে একটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি এবং গবেষণার জন্য রয়েছে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের থাকার জন্য চারটি ডরমেটরি। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলসহ ৪টি আবাসিক হল। সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ৪ জন অভিজ্ঞ ডাক্তার, দুইজন নার্সসহ মোট ১২ জনের একটি মেডিকেল টিম সেবা প্রদান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা। বিভিন্ন রুটে দৈনিক প্রায় ৬০০ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত যাতায়াত করছেন।

সকালের ক্যাম্পাস যেন ব্যস্ত সবাই ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ভাইভা, প্রেজেন্টেশন আর বিভিন্ন সেমিনার নিয়ে। বিকালের ক্যাম্পাস তার যেন বিপরীত। একটু বেলা গড়াতে গড়াতে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক, আর শহীদ মিনারের পাদদেশে জমে উঠে বিভিন্ন আসর। কেউ গ্রম্নপ স্টাডি, কেউ দিচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আবার কেউ গিটার হাতে, কেউবা একতারা হাতে মাতিয়ে রেখেছেন নিজ নিজ আসর। সবকিছু মিলিয়ে সারাক্ষণ প্রাণোচ্ছ্বল 'উত্তরের অক্সফোর্ড'খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষার্থীরা যেন মাদক কিংবা জঙ্গিবাদের মতো খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টুর্নামেন্টের আয়োজনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে সহযোগিতা করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া ও শারীরিক শিক্ষা দপ্তর।

২০২১ সালের ১৪ জুন পঞ্চম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ যোগদানের পর প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের। সেশনজট নিরসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন ড. হাসিবুর রশীদ। বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের দূরদর্শী দিক-নির্দেশনায় ও শিক্ষকদের আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও দ্রম্নততম সময়ে ফলাফল প্রকাশে নজির সৃষ্টি করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেশনজট নিরসনে চার মাসে সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়ার দুঃসাহসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ড. হাসিব। উপাচার্যের দুর্দান্ত নেতৃত্বে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেশনজট নামক যে অভিশাপ শিক্ষার্থীদের হতাশায় ফেলছিল তা নিরসন সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘদিনের অভিশাপ দূর হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের। এছাড়াও একাডেমিক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চলমান।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখেন তারা এখান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। সবুজের এই বিশাল সমারোহ আর ক্যাম্পাসের বড় বড় ভবন, পাখির চোখে এই ক্যাম্পাসটি যেন দাঁড়িয়ে থাকা একটি জ্ঞান বৃক্ষের মতো। প্রতিষ্ঠার ১৬তম বছরে এসে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ুক দিক দিগন্তে- এটিই প্রত্যাশা।