০২-এপ্রিল-২০২৫
০২-এপ্রিল-২০২৫
Logo
রংপুর

রেলমন্ত্রী বদলের পর বদলে গেছে ট্রেনের বগিও, যাত্রীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০৩-০৪ ১৬:২৪:৪৩
...

পঞ্চগড় :
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রেলমন্ত্রী বদলে যাওয়ার সাথে সাথে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে ট্রেনের বগি বদলে গেছে। ট্রেনের নতুন বগির জায়গায় পুরাতন বগি দেয়ায় আগের মতো ট্রেনের জার্নি সুবিধা মিলছে না অভিযোগ যাত্রীদের। তারা বলছেন, আগে পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে যে ট্রেনগুলো চলতো, সেগুলোতে পরিবহনে তারা অনেক আরাম পেতেন। কিন্তু বর্তমান ট্রেনগুলো পুরাতন বগি যুক্ত করায় লক্করটক্কর ভাবে চলা ট্রেনগুলোতে দুরযাত্রায় ভ্রমণে আগের সেই সুবিধা পাচ্ছেন না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে জানা যায়, রেলমন্ত্রী পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে গেছে পরিবেশ। বদলে গেছে ট্রেনের আগের সেই সার্ভিস। ট্রেনের বগি বদলে দেয়ায় যাত্রীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। এ স্টেশনে বর্তমানে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস নামের পাঁচটি আন্ত:নগর ট্রেন ও কমিউটার হিসেবে পঞ্চগড় ও কাঞ্চন কমিউটার ও উত্তরবঙ্গ মেইল চলাচল করছে এ রুটে। এর মধ্যে বর্তমানে পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।

এসব ট্রেনের মধ্যে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ ‘দ্রুতযান এক্সপ্রেস’ ও ‘একতা এক্সপ্রেস’ ট্রেন। এ তিনটির ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন মন্ত্রী বদলের পর বদলে গেছে ট্রেনের বগিও। উন্নত ট্রেনের জায়গায় এ রুটে সংকীর্ণ সিটের ১৮ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ বগি সংযোজিত করা হয়েছে। ট্রেনের সিটগুলো এতটাই সংকীর্ণ যে, বসতে গেলে সিটের সঙ্গে হাঁটু আটকে যায়। সেইসঙ্গে রয়েছে কাছাকাছি বসা যাত্রীর চাপ। এমন ক্ষোভে দেখা দিয়েছে যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে।

জানা যায়, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে সরাসরি প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়। প্রথম দিকে দুইটি ট্রেন চললেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ গঠনের পর পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর এ রুটে যুক্ত হয় আরেকটি ট্রেন। এরপর পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলে রেল যোগাযোগে অভূত উন্নয়ন হয়। ট্রেনযাত্রা স্বস্তির হওয়ায় পঞ্চগড়সহ ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার মানুষের নিরাপদ যাতায়াতে প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে রেলওয়ে। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নূরুল ইসলাম সুজন রেল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব পদ হারানোর পর এ রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে অনেক দিনের পুরাতন নড়বড়ে ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেনের বগি।

যাত্রীদের অভিযোগ, রেলমন্ত্রী বদল হওয়ার সাথে কী ট্রেনের বগিও বদলে গেল। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে পুরাতন সিটগুলো দিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টির উপর জরুরী সমাধান প্রয়োজন। তা না হলে সাধারণ মানুষ রেলপথ ভ্রমণে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

রবিউল ইসলাম নামের অপর এক যাত্রী বলেন, আগে ট্রেনে ভ্রমন খুব ভালো ছিল। রেলমন্ত্রী থাকাকালিন ট্রেনের সিটগুলো ভালো ছিলো, ভ্রমণ আরামদায়ক ছিলো। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন চলে যাওয়ার পর এ রুটে ট্রেনের সিটগুলো ভালো না। অসুস্থ ব্যক্তি এই ট্রেনে ভ্রমণ করলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।

আফসার হোসেন নামের এক ট্রেন যাত্রী বলেন, আমি রেলে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি। আগের বগির যে সিটগুলো ছিল সেগুলো অনেক ভালো ছিল। বর্তমান বগির সিটগুলো খুব খারাপ, চাপা ও পুরাতন।

স্থানীয় মোহাম্মদ রনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা পঞ্চগড়। সে হিসেবে এখান থেকে ঢাকার দূরন্ত সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘ দূরত্বে যাতায়াতে দীর্ঘ সময় ট্রেনেই অবস্থান করতে হয়। এবার ঢাকা যাওয়ার সময় ট্রেনে ভ্রমন করতে গিয়ে খুব খারাপ লেগেছে। পুরাতন বগি, লক্কর টক্করভাবে চলা ট্রেনের ভেতর চরম অস্বস্তিবোধ হয়েছে। অথচ আগের বগিগুলোতে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করা যেত, ট্রেনই নামাজ ঘর ছিলো, মোবাইল চার্জের সু-ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু, পুরাতন বগিগুলোতে এসব সুবিধার কিছুই নেই। ট্রেনের ভেতরের পরিবেশও ভালো না।

পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাসুদ পারভেজ জানান, ট্রেনের বগি বদল হয়েছে সত্য। রেলমন্ত্রী থাকতেই বদল হয়েছে। তবে বগিগুলো ভাল ও মজবুত। কোন সমস্যা নেই।

রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, আগের বগিগুলোর চেয়ে এখনকারগুলো ভালো এবং মজবুত। এগুলোর বডিগুলোও ভালো, ইন্ডিয়ান কোচ। যেহেতু, এই রুটের দূরত্ব বেশি, তাই এখানে ভালো কোচ দেওয়া হয়েছে; যাতে কোন সমস্যা না হয়। আর আগের কোচগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে দেওয়া হয়েছে।