দিনাজপুর :
সারি সারি সবুজ ফুলকপির গাছ পাতার আড়ালে হলুদ রঙের ফুলকপি। উঁকি দিচ্ছে গাড় বেগুনি রঙের বাঁধাকপি। দিনাজপুরের চিরির বন্দর উপজেলায় নানা রঙের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম।
অন্য সব কপির থেকে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় চাহিদা আর দাম ও বেশি। রঙিন এসব সবজিতে ক্রেতাদের আকর্ষন ও চাহিদা বেড়েছে। আগাম টাকা দিয়ে ক্ষেত থেকে কপি নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভালো দাম পাওয়ায় রঙ্গিন কপি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের।
কৃষিবিভাগ জেলায় টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উচ্চ মূল্যের নিরাপদ সবজি চাষ প্রকল্প চালু করেছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা পেয়েছেন সার-বীজের সহায়তা। ফলে বেশি উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে কৃষকরা রঙিনকপি চাষের পাশাপাশি উচ্চমুল্যের সবজি যেমন ইশকোয়াশ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলীসহ নানা পদের সৌখিন সবজি চাষ করেছেন।
দিনাজপুর জেলায় সাদা ফুলকপি ও বাঁধাকপির বিপরীতে চাষ হচ্ছে ক্যারোটিনা (গাঢ় হলুদ), ভেলেন্ডিনা (পার্পেল রং) ফুলকপি ও রবি কিং (পার্পেল) জাতের বাঁধাকপি। ভাল দাম পাওয়ায় এসব সৌখিন সবজি চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে
কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জ্ঞান দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চমূল্যের নিরাপদ ফসল উৎপাদন পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ ও খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করাই গৃহীত প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। জেলায় রবি মৌসুমে ২ হাজার ১৪হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি এবং ২ হাজার ১৬৬ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় শূণ্য দশমিক পাঁচ হেক্টর জমিতে রঙিন কপির চাষ হয়েছিল। এবার এ প্রকল্পের আওতায় ৫২জন কৃষক (প্রতিজন ২০ শতক করে) প্রায় ৩৫ বিঘা জমিতে রঙিন কপির চাষ করেছেন।
সবজি চাষী জহুরুল ইসলাম বলেন অন্যান্য সবজির পাশাপাশি এবারে প্রথম ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। গাছের বয়স হয়েছে ৭২দিন। প্রতিটি গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের রঙিন কপি। গত দুদিন আগে পাইকার খেতে থেকে ৫০ টাকা করে কপি কিনে নিয়ে যায়। ২০শতক জমিতে দেড় হাজার কপি আছে। যদি এক হাজার কেজি ফসল ৫০টাকা কেজি দাম পাই। কপি বিক্রি হবে ৫০ হাজার টাকার। যেখানে অন্য ফসল আবাদ করলে তিনভাগের এক ভাগ লাভ পেতাম। কৃষি বিভাগ থেকে সার-বীজ-জৈব বালাইনাশক পেয়েছি। পাশাপাশি খরচ পড়েছে ১০-১২হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকবে প্রায় ৪০হাজার টাকা।
দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু রেজা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলের কৃষি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্রময়। মূলত আধুনিক পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিতকরণ, পুষ্টিমান কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে রঙিন সবজিতে ভিটামিন এ, সি, আয়রন, খনিজ উপাদানের পরিমান সাদাকপির তুলনায় বেশি থাকে। এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফসলে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করায় ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের আস্থাও বাড়ছে। ভালো দাম পাওয়ায় রঙ্গিন কপি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL