মোঃ আব্দুস সাত্তার, দিনাজপুর :
উত্তর জনপদের জেলা দিনাজপুরে চার বছরের ব্যবধানে সরিষার আবাদ বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। মাঠে সরষের আবাদ। দিগন্তজোড়া মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। এ যেন হলুদের মেলা। ফুলগুলোর সাথে মৌমাছির গুনগুন শব্দে প্রেম। মৌমাছিগুলো লাফিয়ে পড়ছে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে। দিনাজপুরের জেলার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায় । সরিষা চাষে লাভজনক ও পরিশ্রম ও ব্যয় কম হওয়ায় দিনাজপুর জেলায় গত তিন বছরে প্রায় ৪৮ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। সেইসাথে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার ১৩টি উপজেলায় সরিষা আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ৭৬৯ মেট্রিকটন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ২৩ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ২৯ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন।
চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ১৯৭মেট্টিক টন। সেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্টিক টন। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা জেলা কৃষি বিভাগের। জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে । এছাড়াও হাকিমপুর, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামা, কাহারোল, বিরল ও সদর উপজেলায় তুলনামুলক সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। এজেলায় বারি সরিষা- ১৪,১৭,১৮ ও বিনা সরিষা-৯,১১ জাতের সরিষা চাষ বেশি হয়েছে।
বীরগন্জ উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, দুই একর জমিতে বিনা-১১ জাতের সরিষা চাষ করেছি তাতে কাটামাড়াই পর্যন্ত খরচ পড়বে ১২থেকে ১৪ হাজার টাকা। সরিষার ফসল ৮৫ থেকে ৯০দিন পরে তোলা হয়। এবছর সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি বিঘা প্রতি ৯ মণ সরিষা পাব। গত বছর ৩হাজার ২০০টাকা মণ হিসেবে সরিষা বিক্রি করেছি।
চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের কৃষক ধীমান চন্দ্র বলেন এবার ৩ একর জমিতে বারি সরিষা-১৪ চাষ করেছেন। সরিষা চাষে পরিশ্রম কম ও লাভবেশি। আমন ধান কাটার পরে সরিষা লাগিয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার পেয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরে কয়েক বছর ধরে সরিষার আবাদ বাড়ছে। ভোজ্যতেল উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। কৃষক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ সমাবেশ, গবেষণা, সেমিনার করা হয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৮৫টি এসএমই সংগঠন(প্রতিটিতে ৪জন সদস্য) করা হয়েছে। যারা বেশি পরিমানে সরিষা উৎপাদন করে থাকেন। কৃষিবিভাগ তাদের উৎপাদিত সরিষা বীজ বাজারজাতকরনে মোড়ক, ওজন মেশিনসহ প্যাকেজিংয়ের যাবতীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছি। এবছর উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এবার উচ্চ ফলনশীল জাত রাবি-১৮জাতের সরিষা বেশি চাষ হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL