মো. শহিদুল ইসলাম:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চতুর্থবারের মতো ২০২৪ সালেই শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে স্কুল ফিডিং প্রকল্প। ১৫০টি উপজেলা নিয়ে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। ২০২২ সালে প্রকল্পটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বিদেশ গিয়ে খিচুরি রান্না করার পর্যবেক্ষণ থাকলে দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে ডিপিপি সংশোধণের জন্য একনেক থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। ফের প্রকল্পটি নতুন এলাকা নিয়ে চালু হতে হচ্ছে। এবারে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগ্্গিরই প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারে প্রকল্প নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে শেষ মিটিং করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে দুপুরের খাবার পাবে। পরে পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, আশা করি প্রকল্পটি শিগগিরই অনুমোদন পাবে এবং আমরা আগামী মাসেই মিড-ডে মিল চালু করতে পারব। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার হিসাবে প্রতি দিনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে থাকবে মৌসুমি ফল, কলা, ডিম এবং রুটি।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত স্কুলশিশুদের খাওয়ানোর জন্য প্রকল্প চালিয়েছিল। ওই প্রোগ্রাম দেখার পর থেকে সর্বশেষ ২০১০ সালে সরকারি স্কুল ফিডিং চালু করা হয়েছিল। এ কর্মসূচির আওতায় সরকার ১০৪ উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীকে ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট দিয়েছে। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চলে। কিন্তু এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের আগস্টে ৬৫ হাজার ৫৬৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪১ লাখ শিক্ষার্থীকে পাঁচ বছর খাবার দেওয়া অব্যাহত রাখার জন্য ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার কর্মসূচি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়।
এই কর্মসূচিতে খিচুড়িসহ অন্যান্য মিড-ডে মিল সরবরাহ ও প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণের জন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানোর বিধান থাকায় এটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। ফলে ২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই প্রকল্পের অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সে সময় বলেছিলেন, এ প্রকল্প অনুমোদন পায়নি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী এর কাঠামো (মোডাস অপারেন্ডি) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানান, স্কুলে খিচুড়ি রান্না হলে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিকল্পনা সংস্কারের নির্দেশ দেন। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও ঝরে পড়ার হার কমেছে ৬ শতাংশ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালে প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রী ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিকে গমনোপযোগী দরিদ্র শিশুদের ভর্তি হার বৃদ্দিকরণ,প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত উপস্থিতির হার বাড়ানো, ঝরে পড়ার প্রবণতা রোধ করা, শিক্ষা চক্রের সমাপ্তির হার বৃদ্ধিকরণ, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করা।
এ বিষয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্ল্যানিং শাখার পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্কুল ফিডিং প্রকল্প নিয়ে আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি চলতি মাসেই প্রকল্পটি একনেকে পাশ হয়ে যাবে। আগামী মাসে আমরা স্কুল পর্যায়ে কাজ করতে পারব।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL