০৩-অক্টোবর-২০২৪
০৩-অক্টোবর-২০২৪
Logo
সাক্ষাৎকার

পুঁজিবাজার সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা ধরে রেখেছে: কায়সার হামিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২১-০৩-০৩ ১৮:২১:১৭
...

মো. কায়সার হামিদ।  ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসাবে কাজ করছেন বিডি ফাইন্যান্স-এ। এর আগে তিনি উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল বিজনেসের প্রধান হিসাবে আইপিডিসি ফাইন্যান্সে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইল সেলস এবং রিজিওনাল ডিস্ট্রিবিউশনের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কায়সার আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ডিবিএইচ এ কর্মরত অবস্থায় নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়িক মডেল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি আইপিডিসি ফাইন্যান্সের 'ট্রিপল এ' রেটিং অর্জন এবং দেশের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার পেছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমে বিবিএ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।  ব্যাংকিং এবং নন ব্যাংকিং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তিনি ভারত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।  এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বিভিন্ন নলেজ শেয়ারিং সেশনে অংশ নিয়েছেন তিনি।  সম্প্রতিিএক সাক্ষাৎকারে দেশের ব্যাংকিং খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার, অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। 

 বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?

মো. কায়সার হামিদ: এখন আমরা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত দু-তিন বছর থেকেই এই খাতে বেশকিছু সমস্যা দেখতে পাচ্ছিলাম। কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারি, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার, এসবের বিরাট একটা প্রভাব পড়েছে সার্বিক আর্থিক খাতে।  এই কারণে তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ  করেছে ২০১৮-১৯ সালে।  এরপর আরও বেশি সমস্যায় ফেলে দিয়েছে কোভিড। এর কারণে গ্রাহকদের লোনের কিস্তি দিতে হয়নি। এই সুযোগটা ভালো-মন্দ সবাই নিয়েছে। ফলে ক্যাশ ফ্লোর একটা বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।  তার ওপর নতুন ডিপোজিট পাচ্ছিলাম না। কিস্তি ফেরত না পেলেও জামানতকারীদের টাকা দিতে হচ্ছিল নিয়মিত।  ২০২০ সালে  এই অসামঞ্জস্যতা ছিল। আবার ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য দেখেছি।  যদিও এই তারল্য ছিল সাময়িক।  ব্যাংকগুলো নতুন কোনো ঋণ দিচ্ছিলো না।  স্থবিরতা ছিল চারদিকে।  সব মিলিয়ে একটা অস্থির অবস্থা ছিল সার্বিক অর্থিক খাতে। আশার কথা, ধীরে ধীরে সেটা কাটিয়ে উঠছি।

গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তির টাকা পাচ্ছিলেন না, কিন্তু আমানতকারীদের মাসিক টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এ পরিস্থিতি কী করে সামাল দিয়েছেন?

মো. কায়সার হামিদ: অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে কাজ করছে ৩০-৩৫ বছর ধরে। বিডি ফাইন্যান্সেরও প্রায় ২১ বছর। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবাই প্রথম বারের মতো এরকম একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। যাদের আর্থিক অবস্থা শক্ত, প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা মজবুত, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, কেবল তারাই খুব দক্ষ হাতে এ সমস্যা মোকাবিলা করেছে।  করোনার সময় অনেকই কী করবে, না করবে এই সংকটের মধ্য দিয়ে গেছেন।  আমরাও প্রথম মাসখানেক একটু স্থবির ছিলাম।  এরপর থেকে পুরোটা সময় আমাদের অপারেশন চালিয়ে গেছি।  আমাদের যে টেকনোলজিক্যাল প্ল্যাটফর্ম সেটা এমনভাবে তৈরি করেছিলাম, যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় থেকেও কাজ করতে পেরেছি। অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ সময় একদম কাজ করতে পারেনি।  আমরা কিছু ইফেক্টিভ প্ল্যান নিয়ে তার মাধ্যমে ডিপোজিট বাড়িয়েছি।  যার ফলে গত ৪-৫ মাসে আমাদের রিটেইল কাস্টমার বেড়েছে ১৫-২০ ভাগ।  আমরা কাস্টমারের সঙ্গে পার্টনারশিপ ভিত্তিতে কাজ করেছি।  এসব ইফেক্টিভ কার্যক্রমের কারণে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লোনের কিস্তি ফেরৎ পেয়েছি।  আর ডিপোজিটারদের জন্য সময়ভিত্তিক কিছু ইউনিক প্রোডাক্টও তৈরি করেছি।  যা এই করোনাকালীন নিজের এবং পরিবারের অন্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে এসেছে।  এর মধ্যে অনলাইনে ব্যস্ত ডাক্তারদের সিরিয়াল করে দেওয়া, ওষুধ বাসায় পৌঁছে দেওয়া, ইনস্যুরেন্স কাভারেজ দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করে দিয়েছি। আর্থিক এবং পারিবারিক স্বাস্থ্য-সুরক্ষা দুটোই আমরা দিতে পেরেছি।  ফলে কাস্টমারদের সঙ্গে আমাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক হয়েছে।  যার ফলও আমরা পেয়েছি।

করোনার প্রথম ধাপ শেষ হয়ে দ্বিতীয় ধাপ চলছে। পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?

মো. কায়সার হামিদ: করোনার প্রথম বেশকিছু দিন পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল।  এরপর বটম লাইন নির্ধারণ করে দেওয়া কারণে প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো গেছে।  করপোরেট গভর্নেসের জায়গা থেকে স্ট্রং থাকা, বেশকিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটা ধরে রাখতে পেরেছে।  আমার মনে হচ্ছে, অন্য যেকোনো কমিশনের থেকেও বর্তমান কমিশন, স্টক হোল্ডারদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনেক ভিজিবল ও গ্রহণযোগ্য। ফলে ২ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকায় লেনদেন পৌঁছে যাওয়া।  শেয়ার বাজার এক দুদিন পর পরই কারেকশন হচ্ছে।  পার্টিসিপেশন বেড়েছে, নতুন আইপিও আসা শুরু হয়েছে, এটা খুব পজিটিভ।  নতুন আইপিও কী কী ফর্মে আসবে, তাদের প্রাইসিং এসব বিষয় নিয়ে আমরা বেশ ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি।  মনে হচ্ছে, লাস্ট কোয়ার্টারে আমাদের পুঁজিবাজার বেশ ভালো করছে। এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ।

 পুঁজিবাজারে অনেকে বুঝে না বুঝে নিজেদের সর্বস্ব বিনিয়োগ করেন।  এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার পরামর্শ।

মো. কায়সার হামিদ: সারা বিশ্বে সবাই পুঁজিবাজারে ইনভেস্ট করেন।  কিন্তু আমাদের এখানে করেন ট্রেড।  ইনভেস্ট আর ট্রেডের পার্থক্যটা বুঝতে হবে।  ইনভেস্টররা নিজেদের প্রয়োজনীয় সব খরচ করার পর বাড়তি টাকার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ইনভেস্ট করেন।  ফলে এই টাকার বিপরীতে যা আয় হবে, তার ওপর তিনি নির্ভর করেন না।  আর দেশে যারা ট্রেড করছেন, তাদের কার্যক্রম একদম উল্টো।  নিজেদের প্রয়োজনীয় সব টাকা, ক্রেডিট কার্ড বা ব্যক্তিগতভাবে লোন করা টাকা, আবার কেউ কেউ গয়না বা সম্পত্তি বিক্রি করেও এখানে ট্রেড করতে আসেন।  মনে রাখতে হবে, আমরা এফডিআর সঞ্চয়পত্র কিনলেও কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরে সেটার ইন্টারেস্ট পাই।  অথচ শেয়ার বাজারে টাকা লগ্নী করে পরদিনই প্রায় সবাই লাভ পেতে চায়।  এতে বরং আপনার পুঁজি হারানোর সম্ভাবনাই বেশি থাকে।  তাই গুজবে কান না দিয়ে যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন, খোঁজ নিয়ে জানবেন সে কোম্পানির বয়স কতদিন, সম্পদ কী রকম আছে, ব্যবসা কেমন করছে, বাজারে সুনাম কেমন, ভোক্তাদের কাছে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখে বিনিয়োগ করুন।  শেয়ার বাজারে নতুন কেউ আসতে চাইলে তাদের বলবো, কোনোভাবেই শেয়ার বাজারে ট্রেড করবেন না, লম্বা সময়ের জন্য ইনভেস্ট করবেন।  তাহলে আর পুঁজি হারাবেন না, বরং লাভবান হবেন।

আপনার প্রতিষ্ঠানের স্পেশালিটি কী কী? 

মো. কায়সার হামিদ: আমরা কিন্তু ব্যাংক না, আর্থিক প্রতিষ্ঠান।  আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের মডেল হওয়া দরকার- ব্যাংকের কাস্টমারকে আমাদের কাস্টমার করা।  ব্যাংকের মাধ্যমেই তাকে আমাদের সর্ভিসটা দিতে হয়।  আমরা কিন্তু কাস্টমারকে সরাসরি টাকা দিতে বা তার টাকা নিতে পারি না।  অ্যাকাউন্ট খুলতে পারি না।  যার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে, তার সেকেন্ড রিলেশন হিসাবে আমরা ব্যবসা করতে পারি।  তাই যদি কাস্টমারকে ব্যাংকের থেকেও এক্সট্রা ভেল্যু অ্যাড করতে পারি, তাহলেই তিনি আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করবেন। অনেক বেশি ইন্টারেস্ট দিয়েও আপনি গ্রাহককে লম্বা সময় ধরে রাখতে পারবেন না।  অনেক প্রতিষ্ঠান বেশি রেটে ডিপোজিট নিচ্ছেন এবং লোন দিচ্ছেন।  ফলে দিন দিন ঋণখেলাপী বাড়ছে।  আমরা তা না করে খুবই ইনোভেটিভ ওয়েতে গ্রাহককে বৈচিত্র্যময় এবং লাভজনক প্রোডাক্ট (গ্রিণ আর এগ্রো ফাইন্যান্সিং) অফার করছি।  ইউনিক সার্ভিসের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।  নিবিড় যোগাযোগ করছি। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সুসম্পর্ক নিয়মিত রাখছি।

 ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র এসএমই ঋণ পাওয়ার পদ্ধতি একটু কঠিন, ঋণ আদায়ে তাদের ওপর চাপও বেশি।  অন্যদিকে বড় বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পাওয়া যেমন সহজ তেমনি তাদের অনেকে ঋণখেলাপীও হন। কেনো এই বৈষম্য?

মো. কায়সার হামিদ: পুরো দেশের চিত্র বললে এ অভিযোগ অনেকাংশে সত্য। আপনি জেনে খুশি হবেন, ক্ষুদ্র যেসব ঋণগ্রহীতা আছেন, তাদের খেলাপীর পরিমাণ খুই কম।  তারা সহজেই টাকা ফেরত দেন।  অন্যদিকে যারা করপোরেট বা কমার্শিয়াল গ্রাহক, তারা অনেক অঙ্কের টাকা লোন নেন।  নানা কারণে তাদের ওপর অনেক সময় যথোপযুক্ত প্রেসার দিতে পারি না।  ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারি না।  আমাদের প্রতিষ্ঠানে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৪.৮৪ শতাংশ।  গত চার মাসে আমরা তা ৩.২২ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।  এর পুরোটাই এসেছে বড় এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান থেকে।  তাদের সমস্যা বুঝে সে অনুযায়ী পেমেন্ট রিসিডিউল করে দেওয়াতে এটা সম্ভব হয়েছে।  সুতরাং যাদের লোন দেবেন, তাদের ব্যবসার ক্যাশ ফ্লো বোঝা খুব জরুরি।  মনে রাখবেন, একজন মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের মাসিক যা আয়, তার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কিস্তি দেওয়ার সামর্থ থাকে। তাই হিসাবটা মাথায় রেখে ঋণ দিলে, খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমে যাবে বলে আমি মনে করি।

 ব্যাংকের বাইরেও রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল লেনদেন পদ্ধতি। এসব মাধ্যম কী জেনারেল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন?

মো. কায়সার হামিদ: কাস্টমারের লেনদেনের মাধ্যম হচ্ছে এই ডিজিটাল ওয়ালেট। এর মাধ্যমে কেবল টাকা আদান প্রদান করা যাচ্ছে।  আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের বিলও প্রদান করছেন গ্রাহকরা।  তবে, সময় এসেছে আমাদের একটা বিজনেস মডেল তৈরি করার। এখানে তিনটি ধাপ রয়েছে। কাস্টমার, ডিজিটাল ওয়ালেট আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই তিনকে সঠিকভাবে কানেক্ট করতে পারলে সাংঘর্ষিক নয় বরং একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে।  এই ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে পারলে, ছোট ছোট গ্রাহকরা ডিপিএসের কিস্তি, ঋণের কিস্তি সহজে পরিশোধ করতে পারবেন।  এতে তার সময় এবং অর্থ খরচ দুটোই বাঁচবে।  গ্রাহকরাও একটা অটো সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে যাবে।  এসব বিল, ঋণের টাকা গ্রহণের জন্য যে জনবল দরকার হচ্ছে আমাদের বা ব্যাংকের, সেটারও আর দরকার হবে না।

 দেশের মোট জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, জীবন যাত্রার তুলনায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি বলে মনে করেন কী?

মো. কায়সার হামিদ: নিঃসন্দেহে বেশি।  নির্দিষ্ট এলাকায়, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য যতগুলো ব্যাংক থাকা দরকার, সে হিসাবে মানে ব্যাংকের ঘনত্ব হিসাবে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের শহর বলা যায়।  দেশের বাইরে বিভিন্ন বড় বড় শহরে আমরা ১০ থেকে ১৫টার বেশি ব্যাংক দেখি না।  অথচ আমাদের প্রায় ৬০টা ব্যাংক আর ৩৫টা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করছে।  আমাদের এখানে এন্ট্রি ডোর অনেক বড়।  কিন্তু বেরুনোর রাস্তা নাই।  ফলে অনেকগুলো ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বেশ কঠিন সময় পার করছে।  তারপরও মানুষের আস্থা চলে যাবে বলে যারা সমস্যায় আছে, তাদের কোনো বেরুবার পথ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে না।  দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে।   জনসংখ্যা, তাদের জীবনযাত্রা, মাথাপিছু আয় যেভাবে বাড়ছে, তাদের সেবা দেওয়ার মতো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সে তুলনায় অনেক কম।  ৩৫টা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ৫টার বেশি প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডিংয়ে নাই।  ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।  প্রতিকূল অবস্থায় পড়লেই কেবল টের পাওয়া যায়, কতগুলো ব্যাংক টিকে থাকার মতো যোগ্যতা রাখে।

 রিলেটেড বিষয়ে না পড়েও অনেকে এই পেশায় আসছেন।  ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য রিলেটেড বিষয়ে পড়াশোনা কী জরুরি?

মো. কায়সার হামিদ: অন্য বিষয়ে পড়েও এই সেক্টরে কাজ করার বিষয়টা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হচ্ছে।  ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু বিভাগের জন্য রিলেটেড বিষয়ে পড়াশোনা দরকার হয়।  এর বাইরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জেনারেল এডুকেশন, বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টনেস, দূরদর্শিতা, ভালো ব্যবহার, কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে জানা এসব যোগ্যতা যার বেশি তিনিই ভালো করছেন।  আমরা অনেকে বিদ্যান হয়ে উঠছি কিন্তু সামাজিক বা মানবিক মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠছি না। ফলে কাজের যোগ্যতা আর দক্ষতা বাড়ছে না।  সাধারণ মানুষের আস্থা পেতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফ্রন্ট লাইন, রিলেশনশিপ, সেলস এসব বিভাগে কর্মরত সবাইকে মানবিক গুণের অধিকারী হতে হবে। এখানেই কিন্তু বেশি জনসংখ্যা কাজ করছেন।  তাই এখানে সাধারণ যে কোনো বিষয়ে পড়ে আসলেই হয়।  এছাড়া অডিট, ফাইন্যান্স, আইটি, ক্রেডিট এসব জায়গায় কাজ করার জন্য রিলেটেড বিষয় হওয়াটা জরুরি।