২৫-নভেম্বর-২০২৪
২৫-নভেম্বর-২০২৪
Logo
সারাদেশ

আরেকটু ভাঙ্গলেই নদীতে মিলিয়ে যাবে সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিতঃ ২০২২-০৮-০১ ১৮:৪৪:০৫
...

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর পার ঘেষে নির্মিত ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আরেকটু ভাঙ্গলেই নদীতে মিলিয়ে যাবে।  ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল।  মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকার এলাইড হিমাগার ও কদম রসুল হিমাগারের সামনে রাস্তাটির অংশ আরেকটু ভাঙ্গলেই নদীতে মিলিয়ে যাবে পুরো সড়কটি ।  ইতিমধ্যে সড়কের ৭৫ ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।  সংস্কারের অভাবে রাস্তার পাশে নদীর পারে ফেলানো ব্লক খসে গিয়ে ও ধ্বসে পরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট থেকে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা পর্যন্ত সোয়া এক কিলোমিটার এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ যাতায়াত করে থাকে।  এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থান মুক্তারপুর বেসিক শিল্পগনরীর পাশের এ সড়ক দিয়ে প্রাচ্যের কলকাতা খ্যাত কমলাঘাট,মীরকাদিক ব্যবসায়িক এলাকার কোটি কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করত।  কিন্তু প্রায় ১ মাস আগে সড়কটির মুক্তারপুর এলাকায় ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ পথের যাত্রী,চালক ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল রবিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সড়কের মুক্তারপুর অংশের প্রায় ২শ মিটারের শতকারা ৭৫ভাগ অংশ ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।  ব্যস্ততম সড়কটি দিয়ে হাতে গুনা কিছু রিক্সা ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চলছে।  এছাড়া ধলেশ্বরী তীরের এই সড়কটির বেশির ভাগ স্থানের পিচ ঢালাই উঠে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।  সড়কের অন্তত ২০-২৫ টি অংশে ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা বাঁশ ও বালুর বস্তা ফেলে রেখেছে।  তবে মুক্তারপুর এলাকার এলাইড ও কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের সামনের প্রায় ২০০ মিটার রাস্তার অধিকাংশ অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে।  ভাঙন আটকাতে বাঁশ পুতে বেড়া দেওয়া হয়েছে।  তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।  ওই ভাঙা সড়ক দিয়েই বাধ্য হয়ে ঝুকিঁ নিয়ে কোনরকম যাতাযাত করছে স্থানীয়রা ।

স্থানীয়রা বলেন, এই সড়কটির পাশেই মুক্তারপুর শিল্পনগরী।  এ সড়ক দিয়ে পঞ্চসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর, মালিপাথর, ফিরিঙ্গিবাজার,রিকাবিবাজার ও মিরকাদিম পৌরসভার অর্ধলক্ষ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।  এছাড়া এ সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে একাধিক হিমাগার এসব হিমাগারে পন্য আনা নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি।  এছাড়া প্রাচ্যের কলকাতা খ্যাত কমলাঘাট ব্যবসায়িক এলাকা এবং রিকাবিবাজারের কোটি কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ট্রাক এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করত।  কিন্তু প্রায় ২৫ বছর আগে এই রাস্তাটির পাশের ধলেশ্বরী নদীতে রাস্তাটি রক্ষার জন্য সিমেন্ট ও পাথর দিয়ে তৈরী ব্লক ফেলানো হয়।  কিন্তু দীর্ঘদিনেও ওই ব্লকগুলো সংস্কার না করায় ধীরে ধীরে এই ব্লকগুলোর শরীরের অংশ হতে পাথর খসে পরেছে যার কারনে নদীর পারে পানির স্রোতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।  পরে ব্লক খসে আস্তে আস্তে নদীতে বিলীন হচ্ছে সড়কটি।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয়, এ পথের যাত্রী,চালক ও ব্যবসায়ীরা।

ওই সড়কের পাশের মালির পাথর গ্রামের অটো রিক্সা চালক মোকসেদুল রহমান বলেন, রাস্তাটি পঁচিশ বছর আগে নির্মাণ করা হয়।  প্রায় ২০ বছর আগে রাস্তার পাশে ব্লক ফেলানো হয়।  কিন্তু এরপর আর রাস্তাটি সংস্কার না করায় রাস্তার এই অবস্থার সষ্টি হয়েছে।  এ বছর সিলেটের বন্যার আগাম পানি এ নদী দিয়ে আসার সাথে সাথে রাস্তাটি ধ্বসে পড়ে ।

এ পথে যাতায়াতকারী আব্দুল হক বলেন, রাস্তাতো সবই নদীতে ভেঙ্গে গেছে একটু অংশ বাকি আছে।  আগে রাস্তা দিয়ে বড় বড় গাড়ি চলতে পারলেও এখন রিক্সা ছাড়া কিছুই চলতে পারছে না।  দীর্ঘদিন যাবত এই অবস্থা হয়ে পরে রাইছে।  সংস্কার করা হচ্ছে না।

এ রাস্তার কথা শুনলে কোন রিকশাচালক ভাড়া বেশি দিলেও আসতে চান না।

ট্রাক চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১ মাস আগেও ঢাকা, নারায়নগঞ্জ হতে মাল নিয়ে কমলাঘাট নদী বন্দর আবার কমলাঘাট নদী বন্দর হতে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এ পথ দিয়ে মুক্তারপুর সেতু হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতাম।  রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় এখোন অনেক রাস্তা ঘুরে বিকল্প পথ সিপাহীপাড়া হয়ে মুক্তারপুর সেতুতে আসতে হচ্ছে।  বিকল্প পথে সব সময় যানজট থাকে।  তাই অনেক বেশি সময় যাতায়াত করতে লাগছে।

উপজেলা এলজিইডি সুত্রে জানাগেছে, গত অর্থবছরে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট থেকে ফিরিঙ্গবাজার পর্যন্ত এই সড়কের ১৩শত মিটার সংস্কারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।  গত ফেব্রুয়ারি মাসে আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি টাকায় কাজটি দেওয়া হয়।  রাস্তাটির মুক্তারপুর অংশে ৩১০ মিটার আরসিসি এবং বাকি অংশে পিচ ঢালাই করা হবে।  সড়কের ভাঙন ঠেকাতে নির্মান করা হবে সুরক্ষা দেওয়ালও।

আবিদ মনসুর কন্সট্রাকশন লিমিটেড ঠিকাদার মো.ফিরোজ আলম বলেন, আমাদের রাস্তার কাজ চলমান ছিল।  বর্ষার কারণে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায় ।  বর্ষার পানি কমার সাথে সাথে কাজ আবার শুরু হবে।  ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।  বাকি কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্য শেষ করবো।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো.শফিকুল হাসান বলেন, নদীর স্রোতের কারণে রাস্তার কয়েকটি স্থান নদীতে বিলীন হয়েছে।  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব করেছে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপর চাপ প্রয়োগ করেছি।  তারা ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।  সেই সঙ্গে বর্ষার পানি কিছুটা কমে আসলেই দ্রুত কাজ শুরু করে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য তাদের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।