কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৭)নামের যুবকের খন্ড খন্ড মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত ২টায় শুরু করে সকাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে নিহতের খন্ড খন্ড (৮টুকরো) দেহাংশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এঘটনায় জড়িত সন্দেহে কুষ্টিয়া শহরে এক দশক ধরে কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডব হোতা হত্যাসহ নানা অপরাধে কুষ্টিয়া মডেল থানার প্রায় ডজনাধিক মামলার এজাহার নামীয় এক্স ছাত্রলীগ নেতা সবিজ আহমেদ (২৫), জনি আহমেদ(২২) ও সজল আহমেদ (২৪)সহ ৪ যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত যুবক হলেন- দৌলতপুর উপজেলার বাহিরমাদি গ্রামের বাসিন্দা মওলা বক্সের ছেলে কথিত অন লাইন ব্যবসায়ি কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লকের একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী মিমি খাতুনসহ বসবাসরত মিলন হোসেন (২৭)।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি জানান, ‘নিহত মিলন হোসেনের পূর্ব পরিচিতি এই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আটক সাজিব, সজল ও জনিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে টাকা পয়সা ভাগাভাগি সংক্রান্ত দ্বন্দের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে’। এমুহুর্তে এর বেশি বলা যাচ্ছে না। আটক যুবকদের জিজ্ঞাসাদ শেষে এঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা বিস্তারিত জানা যাবে।
নিহতের সদ্য বিবাহিত(৯মাস পূর্বে বিবাহিত) স্ত্রী মিমি খাতুন (২৫) জানান, ‘গত ৩১ জানুয়ারী, সকাল ১০টায় বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পায়। তখন থেকেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি শুরু করি। সম্ভাব্য সকল স্থানে খুজে কোন সন্ধান না পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। ডায়েরী নং ২৩২৮ তাং ৩১/০১/২০২৪। মিমির অভিযোগ, ‘মিলনের ব্যবসায়িক পার্টনার সজল ওই দিন সকালে মোবাইল করে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই মিলনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি’। ‘আমি আগে জানতাম না যে সজল একজন অস্ত্রধারী ও মাদক সম্পৃক্ত ব্যক্তি। জানলে আমি মিলনকে ওর সাথে মিশতে দিতাম না। সজল খুব ভয়ঙ্কর লোক, ওর একটা গ্যাং আছে, ওরাই মিলনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে’। আমি এই হত্যার বিচার চাই, ফাঁসি চাই’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া মডেল থানার এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক জানান, ‘আটক সজিব, জনি ও সজল ওরা তো কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছে। এরা হত্যা, ব্লাবমেইল (কৌশলে জিম্মি), মোবাইল নাম্বার ক্লোন বা হ্যাক করে বিকাশের টাকা প্রতারণা, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অপরাধ সংঘটের জতিড় একটি চক্র, এবং প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে মিলন হোসেন নামে যে যুবক নিহত হয়েছে সেও এই চক্রের সাথে জড়িত। কিশোর গ্যাং লিডার খ্যাত সজিবের বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে’।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শেখ মো: সোহেল রানা জানান, ‘গত ৩১ জানুয়ারী নিহতের স্ত্রী মিমি খাতুনের করা সাধারণ ডায়েরীর সুত্র ধরে সজল ও সজিব নামে দুই যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকান্ডে জড়িত বলে স্বীকার করেছে, তারা কিভাবে এবং কেনো এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেবিষয়েও একটি প্রাথমিক ধারণা দিয়েছে। আটক যুবকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নিহতের খন্ড খন্ড মরদেহ পদ্মা নদীর চর থেকে উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ’।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL