যশোর :
যশোরে দোর্দন্ড দাপটে অপরাধীরা। কোনভাবেই যেন তাদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না যশোরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফলে জেলায় গত চার দিনে খুন হয়েছে চার জন।
এসব খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এসব খুনের মধ্যে রয়েছে,শনিবার সন্ধ্যা (১০ই জানুয়ারী) সাতটার দিকে যশোর রেল স্টেশন প্লাটফর্মে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে একাধিক মামলার আসামি জুম্মন (২৬) কে হত্যা করেন। সে যশোর শংকরপুর জমাদ্দার পাড়া এলাকার মৃত মুরাদ সরদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মাদকসহ ছয়টির অধিক মামলা ছিলো বলে জানায় পুলিশ। স্থানীয়রা জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জুম্মান খুনের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার(৯ই ফেব্রুয়ারী) দুপুরে দিকে যশোর সদর উপজেলার ১২ নং ফতেপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা মান্দিয়া বাওড়কান্দা আদর্শ পাড়া জামে মসজিদের ২০০ গজ দূরে আসাদের পুকুরের পাড় থেকে মহাসিন (৪০) নামে এক যুবকের আগুন দিয়ে পোড়ানো বীভৎস মৃত দেহ উদ্ধার করে যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশ। সে যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া তোলানুরপুর গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছিলো নিহত মহাসিন একজন কৃষক। পাশাপাশি তিনি সুদে টাকা প্রদান করতেন। পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে খুন করা হয়।
শনিবার (১০শে ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যা যশোর রেল স্টেশনের প্লাটফর্মে জুম্মান নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এ সময়ে হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে প্ল্যাটফর্মে ৫০ গজ দূরে অবস্থানরত জিআরপি পুলিশ অবলোকে তাকিয়ে থাকলেও তাকে কেউ বাঁচাতে আসেনি। পুলিশ জানিয়েছিলেন অন্তকলাহের জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টার দিকে যশোর সদর উপজেলার রাজারহাট রামনগরের সুতিঘাটা এলাকায় চুরির অভিযোগ তুলে ফয়েজুল গাজী (২৭) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। নিহত ফয়জুল যশোর সদর উপজেলার গোলদার পাড়া সুতিঘাটা গ্রামের জালাল উদ্দিন গাজীর ছেলে। সে স্থানীয় একটি ইটের ভাটার শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত ছিলো। কতিপয় যুবক তাকে চোরের তকমা লাগিয়ে তাকে রাতভর নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যা করেন।
অন্যদিকে, রোববার (১১ ফেব্রুয়ারী) রাত পৌনে ১০টার দিকে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারে মুরাদ হোসেন (৩০) নামে এক যুবলীগ নেতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহত মুরাদ হোসেন (৩০) নওয়াপাড়ার সরদারপাড়ার শাহাবুদ্দিন ছেলে ও নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে এক সময়ের অভয়নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী বেঁচা অধিকারীর সহযোগী ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে মুরাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এসার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটি উপজেলা সদরের ঘটলেও বাকি তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যশোর শহর ও শহরতলিতেই।
এ চার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যশোরের সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে যশোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডই ক্লুললেস হত্যাকাণ্ড। সব হত্যাকান্ডেই পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো অনুসন্ধান চলছে এরপর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য যশোর রেলস্টেশন, পৌর পার্ক, শংকরপুর বাস টার্মিনাল ও মনিহার এলাকায় অহরহই ঘটে ছুরিকাঘাতের ঘটনা। এমনকি এসব উঠতি বয়সি সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতন নিপীড়িত হতে বাদ যায় না খোদ পুলিশ সদস্যরাও। আরো অভিযোগ রয়েছে শহর জুড়ে যেসব উঠতি বয়সী অপরাধীরা রয়েছে তাদের অধিকাংশের আশ্রয়স্থল যশোর রেল স্টেশন প্লাটফর্মে। দিনে ও রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গা অপরাধ সংঘটিত করে এসব অপরাধীরা রেলস্টেশনে প্লাটফর্মে নির্বিঘ্নে আশ্রয় থাকে। তবে অজ্ঞাত কারণে জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না।
বিষয়টি নিয়ে যশোর জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমাদের শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্মের উপরে নিরাপত্তার দায়িত্ব। প্ল্যাটফর্মের আশেপাশে কি হলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তার জন্য এখানকার স্থানীয় থানা পুলিশ রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা অপরাধ করছে পুলিশ সেই সব অপরাধীদের আইনের আশ্রয় নিয়ে আসছে। তাই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা এটা পুরো জেলার নিয়ন্ত্রণহীন বলা যাবে না বলে জানান কর্মকর্তা।
যশোরে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) বেলাল হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড আধিপত্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে ঘটেছে। তাছাড়া অন্য কোন কারণ আছে কিনা? সে বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অধিকত তদন্ত চালানো হচ্ছে। এর পরেই বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL