নিজস্ব প্রতিনিধি
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাল্টা, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেয়ার কথা বলে প্রথমে নেয়া হয় ইন্ডিয়ায়। সেখানে গিয়ে যুবকরা জানতে পারেন কারই হয়নি ভিসা। পরে ফিরে আসেন বাড়িতে। মাদারীপুরের ৩০-৩৫টি গ্রামের শতাধিক যুবকের কাছ থেকে এমন অভিনব প্রতারণা করে ১২ কোটি টাকার বেশি নিয়ে উধাও এক প্রতারক। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি বার বার প্রশাসনের কাছে ধন্না দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগিরা। অভিযোগ উঠেছে, একাধিক মামলা হলেও অদৃশ্য কারণেই ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত খোকন। যদিও পুলিশ বলছে, প্রতারককে ধরতে চলছে অভিযান।
জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ঝাউতলা গ্রামের বাসিন্দা রেবা বেগম। তার ছেলে মেহেদি হাসানকে বিদেশ পাঠানোর জন্য দালাল খোকন চোকদারকে দেন ৭ লাখ টাকা। একইভাবে বালিগ্রামের সুমন হাওলাদার ও মাইনুল হোসাইনও ৭ লাখ টাকা করে তুলে দেন। দুই মাসের মধ্যে বিদেশে নেয়ার কথা থাকলেও আড়াই বছরেও কেউই যেতে পারেননি বিদেশে। এতে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
তাদের মতো দক্ষিণ রাজদি, বালিগ্রাম, মোস্তফাপুর, কৃষ্ণনগর, মাইজপাড়া, মাদ্রাসহ ৩০-৩৫টি গ্রামের শতাধিক যুবককে মাল্টা, পতুগার্লসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭-১২ লাখ টাকা করে নেয় অভিযুক্ত খোকন। ভিসা হয়েছে বলে কয়েক দফা এসব যবুকদের নেয়া হয় ইন্ডিয়াও। পরে যুবকরা বুঝতে পারেন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী অভিযোগ, গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে এনে লাখ লাখ টাকা তুলে দেন খোকনের হাতে। বিশ^াস অর্জন করাতে অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ব্যাংকের বø্যাঙ্ক চেক সে। অথচ খোকনের কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই নেই টাকা। পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করে খোকন। একপর্যায়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এই প্রতারক। পরে আদালত ও প্রশাসনের দারস্থ হয় ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী রেবা বেগম বলেন, আমি আড়াই বছর আগে আমার ছেলেকে বিদেশে নেয়ার জন্য খোকন চোকদারের কাছে ৭ লাখ টাকা দেই। সে সময়ে বলেছিল, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে মাল্টা নিয়ে দিবে, কিন্তু আড়াই বছরেও সে বিদেশে নিতে পারিনি। এখন টাকা চাইলে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। পরে বুঝতে পেরেছি, সে বড়মাপের এক প্রতারক।
সুমন হাওলাদার নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, বিদেশে নেয়নি, আর আমার পাওনা ৭ লাখ টাকাও ফেরত দেয়নি। পরে আমি টাকা না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু এখনো সে গ্রেফতার হচ্ছে না।
ভুক্তভোগী মাইনুল হোসাইন সুজন বলেন, আমি বিদেশে যাবার জন্য আমি খোকন চোকদারকে টাকা দেই। কিন্তু সে বিদেশ নিচ্ছে না। আমি দুই বছর যাবার ভুক্তভোগী। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, বিদেশে গিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবো। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। খোকন দালালের মুখে ছিল মধু, আর অন্তরে বিষ। এই প্রতারকের কথায় আমরা একশোর বেশি মানুষ ফাঁদে পড়েছি। ১২ কোটি টাকা বেশি নিয়ে সে লাপাত্তা। আমরা পাওনা টাকা ফেরত চাই, পাশাপাশি প্রতারক খোকনের বিচার চাই।
মানবধিকার কর্মী সবুল বিশ^াস বলেন, কয়েকটি গ্রাম থেকে এভাবে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বড়মাপের প্রতারক খোকন। অথচ, সে এখনো গ্রেফতার হচ্ছে না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। অসহায় গরীবদের পাওনা টাকা ফেরত পাবার সব ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি খোকনের গ্রেফতার দাবি জানাচ্ছি।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, বিদেশে নেয়ার কথা বলে অসহায় মানুষের সাথে প্রতারনা করেছেন খোকন চোকদার। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য মতে, কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা খোকন। একাধিক মামলা হয়েছে প্রতারকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে ধরতে চলছে অভিযান। শিগগিরই সে আইনের হাতে ধরা পড়বে।
এদিকে ঘটনা জানতে অভিযুক্ত খোকন চোকদারের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্যই পাওয়া যায়নি।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL