নিজস্ব প্রতিনিধি
মো.আবুল বাশার নয়ন, বান্দরবান :
বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই থানছি উপজেলার তিন্দু রাজা পাথর এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা দূর্ঘটনার শিকার হয়।
এতে প্রায় সময় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। সেই সাথে রেমাক্রী ও তিন্দু ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাড়া গুলোতে পানি বাহিত রোগ ডায়রিয়া মহামারী আকার ধারণ করলে মৃত্যুর মিছিল নিশ্চিত হয়ে পড়ে। রেমাক্রী ও তিন্দু ইউনিয়নে যাতায়াতের কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরী না হওয়ায় ঐ এলাকার মানুষ এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলের পথিক।
বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় তিন্দু ও রেমাক্রী ইউনিয়নে প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত রোগীদের জরুরী ভাবে হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনেই মরতে হয় স্বজনদের। পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে ফলজ বাগান সৃজন করা হয়েছে এই দুই ইউনিয়নে। কিন্তু নৌকা যোগে নদীপথে আম, কাঠাল ও আনারস জাতীয় ফল পরিবহন ব্যয়বহুল হওয়ায় মৌসুমি এই ফলগুলো গাছেই পচে যায়।
ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে চাষিরা। এতে অনেক চাষি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ফলজ বাগান সৃজনে। এ বিষয়ে রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, রেমাক্রী ইউনিয়ন অতি দুর্গম। ইট বালি সিমেন্ট পরিবহন খুব কঠিন। তাই এক পাড়া হতে আরেক পাড়ায় যাতায়াতের পাকা সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়না। তবে থানছি পর্যন্ত পাকা সড়ক ও ব্রীজ হয়ে যাওয়ায় এখন রড, সিমেন্ট পরিবহন সহজ হয়েছে এবং ইদানিং কিছু কিছু জায়গায় পাকা সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। তবে থানছি থেকে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক খুব প্রয়োজন।
এই সড়কের অভাবে প্রতি বছর নৌকা দুর্ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ মারা যায়। কৃষিপন্য পরিবহন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক সমাজ। রাস্তা না থাকায় মুমুর্ষ রোগীদের হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। বিনা চিকিৎসায় মারা যায় রোগী।
সব কিছু বিবেচনা করে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয়ের আন্তরিকতায় এলজিইডি একটি টিম রেমাক্রী ঘুরে গেছে। আশা করা যায় তিন্দু হতে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা জানান, সড়কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয় আশা দিয়েছিলেন। তারই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সম্প্রতি এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ আমাদের একটি টিম সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য পুরো এলাকা ঘুরে দেখা হয়েছে।
এলজিইডির মাধ্যমে ব্রীজ ও পাকা সড়ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবী। পাকা সড়ক ও ব্রীজ নির্মাণ হলে তিন্দু এবং রেমাক্রী ইউনিয়নের আমুল পরিবর্তন ঘটবে। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের আর বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না। ফল চাষীরা তাদের ফসল ন্যার্য্য দামে বিক্রির নিশ্চয়তা পাবে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা দুর্ঘটনা কমে আসবে। এ ছাড়াও ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের যাতায়াত সহজতর হবে এবং অল্প সময়েই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য অবলোকন করে ঘরে ফিরতে পারবে। এলজিইডি'র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন জানান, তিন্দু থেকে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য সম্প্রতি উর্ধতন কর্মকর্তাসহ পরিদর্শন করে এসেছি। তিন্দু থেকে রেমাক্রী পর্যন্ত প্রস্তাবিত সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এলাইনমেন্টের সুবিধার্থে কাঁচা সড়কটি দৃশ্যমান করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।
ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মেঠো সড়কটি দৃশ্যমান করার পর এলজিইডি পক্ষ থেকে এলাইনমেন্ট করবে। তারপর প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে। সকলের সহযোগিতা থাকলে প্রক্রিয়াটি দ্রুত গতিতে এগুতে পার বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে বান্দরবান এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার জানান, কৃষিপন্য সহজে পরিবহন, রোগীদের স্বাস্থ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করাসহ পর্যটকদের যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য তিন্দু থেকে রেমাক্রী পর্যন্ত পাকা সড়ক হবে। তিন্দু খালের উপর একটি নান্দনিক ব্রীজ নির্মাণ করা হবে।
ইতিমধ্যে বান্দরবান বিভিন্ন উপজেলায় ১১টি ব্রীজের এলাইনমেন্টসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে ৮টি ব্রীজ অনুমোদনের জন্য তৈরী হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় চলে যাবে। এই ৮টি ব্রীজের মধ্য তিন্দু খালের ব্রীজও তালিকায় রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন জাতিসংঘের ঘোষনা মোতাবেক ২০৩০ সালের মধ্য বিশ্বের সবগুলো দেশ এসজিডি বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনা মোতাবেক একটি গ্রামের ২ কিলোমিটারের মধ্য পাকা সড়ক থাকতে হবে। সুতরাং পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি ইউনিয়নে পাকা সড়ক নাই এইটা কল্পনার বাইরে।
এলজিইডি পক্ষ থেকে ডিম পাহাড় হয়ে তিন্দু পর্যন্ত সড়কটি পাকা করা হবে। পরবর্তীতে তিন্দু হয়ে রেমাক্রী পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ করা হবে এবং রেমাক্রী বাজার সংলগ্ন আরো একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশ যাতে ধংস না সেদিকে খেয়াল রেখে প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো কিছু কপি করা যাবে না
Website Design & Developed By BATL