২৭-নভেম্বর-২০২৪
২৭-নভেম্বর-২০২৪
Logo
বরিশাল

মঠবাড়িয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের রস

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিতঃ ২০২৪-০১-২৯ ১৫:৩৯:৩৭
...

মো. রুম্মান হাওলাদার, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে খেজুর গাছের সংখ্যা। যেগুলোও আছে, গাছির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তা থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ কার্যক্রম। এতে হারাতে বসেছে এই অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের রস ও পাটালি গুড়। এক দশক আগেও চোখে পড়তো উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারে শীতের সকালে সারি সারি খেজুরের রসের ভরা কলস। খেজুর গাছ কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামসহ গাছ কাটার গাছিদের ব্যবস্থার দৃশ্য। প্রতিদিন গাছিরা খেজুর রস সংরক্ষণ করার জন্য ঘুরে বেড়াতেন গ্রামের মেঠোপথ গুলোতে রস সংরক্ষণ কাজে। এক সময় অহরহ দেখা গেছে রস আহরণে গাছিরা কোমরে দড়ির সাথে ঝুড়ি (টোনা) বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি (খিল) বসানোর কাজ করছে। এখন আর চোখে পড়েনা সেই দৃশ্য, তেমনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। মঠবাড়িয়ার সদর, আমড়াগাছিয়া, সাপলেজা, তুষখালী, বেতমোর, মিরুখালী ও বড় মাছুয়া ইউনিয়নে সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়ের পাটালি ও নালি গুড়।

এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে খেজুর গাছ বর্গা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতো। ফলে সে সময় খেজুর গাছের কদরও ছিল বেশি। এক সময় খেজুরের রস বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৮-১০ টাকা। বর্তমানে তা ৫০-৮০ টাকা। অনেক জায়গায় ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া রসের কলস ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শীতের মৌসুম এলেই এক সময়ে গ্রামের ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পায়েস (সিন্নি), রসের গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাড়ো রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহোৎসব চলত। আর রস জ¦ালাতে আগের দিনের বিকেলে, খড়-কুটা, গাছের শুকনো পাতা কুড়াতের নারীরা।

খেজুর গাছ হারিয়ে যাবার প্রধান কারণ হিসেবে লোকজন মনে করছেন- ইট ভাটার জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারের জন্য বেপরোয়া খেজুর গাছ নিধন। গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে খেজুর গাছ ও খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে হাতেগোনা কিছু খেজুর গাছ।

উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের গাছি ফারুক হোসেন (৪৫) জানান, আগে তাদের দারুন কদর ছিল, মৌসুম শুরুর আগ হতেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কটি খাজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু এখন আর কেউ ডাকে না। আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই। তার কিছু গাছ আছে সেগুলো চার বছর ধরে কেটে রস সংগ্রহ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

প্রবীণ গাছি জামাল ফরাজি (৫২) সাথে কথা হলে তিনি জানান, রাস্তাগুলো সংস্কার এবং ইট পোড়াানোর কাজে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হলেও নতুন করে আর কেউ গাছ লাগাচ্ছে না। খেজুর গাছ যে ভাবে নিধন হচ্ছে যদি সেভাবে রোপণ না করে, তাহলে কয়েক বছর পর খেজুরের রস গ্রামেও পাওয়া যাবে না। সরকার যদি গ্রামের রাস্তা গুলোর পাশে নতুন করে খেজুর গাছ রোপণ উদ্যোগ নেয়। তাহলে মানুষ আগের মতো খেজুরের রস খেতে পারবে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, মানুষ খেজুর গাছ যে ভাবে নিধন করছে সেভাবে রোপণ করে নাই। সবার অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিয়ে খেজুর গাছ রোপণ না করে কালের বিবর্তনে শহরের মত গ্রামও খেজুর রস হারিয়ে যাবে। আর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের বেশি বেশি খেজুর গাছ রোপন করতে হবে।